Ajker Patrika

ঘরে ঘরে ওড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ঘরে ঘরে ওড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা

‘জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরাট পরিবর্তন আসিয়াছে, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি পাইয়াছে বহুগুণে, স্বচ্ছতা আসিয়াছে তাহাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে। গত ১লা মার্চ হইতে ৭ই মার্চের মধ্যে আন্দোলনের মধ্য দিয়া পূর্ব বাংলার জনগণ যে চেতনার অধিকারী হইয়াছে, সে চেতনাকে মুছিয়া ফেলা সম্ভব নয়।

জনসাধারণের দাবী-দাওয়া পূরণের মাধ্যমেই কেবল বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করা সম্ভব।’ এ মন্তব্য করেছিল দৈনিক পাকিস্তান ১০ মার্চ, ১৯৭১ সালের সম্পাদকীয়তে। ‘আর দেরী নয়’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সম্পাদকীয় কলামে আরও বলা হয়েছিল, ‘গত এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব বাংলার বুকে প্রচণ্ড গণআন্দোলনের মধ্যে দিয়া যেসব শিক্ষা উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছে, সেগুলি হইলঃ (এক) বল প্রয়োগ করিয়া জনগণকে দমানো যাইবে না, (দুই) জনপ্রতিনিধিদের হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করিতে হইবে, (তিন) ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সরকারকে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে, এবং (চার) জনসমর্থিত ছয় ও এগার দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের পথ বাধামুক্ত করিতে হইবে।’

একই দিনে দ্য পিপলের সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল, ‘Bhutto Responsible for Spilling Bengalese’s Blood’ (বাঙালির রক্ত ঝরানোর জন্য ভুট্টো দায়ী)। এতে বলা হয়েছিল, ‘দরকার হলে বন্দুকের নলের মাধ্যমে বাঙালির রক্ত চোষার ও সম্পদ লোটার সেই পুরনো ষড়যন্ত্রে আইউবমনা আমলারা যে ভুট্টোর চারপাশে সক্রিয়, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।’ এতে আরও বলা হয়, ‘এটা স্বীকার করতে হবে যে, ৩ মার্চের অধিবেশন স্থগিত করে সর্বোচ্চ আঘাত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

আজ সেই ১০ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সারা দেশে সরকারি ও আধা সরকারি অফিসের কর্মচারীরা দশম দিনের মতো কাজে যোগদান থেকে বিরত ছিলেন। বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও ব্যবসাকেন্দ্র খোলা ছিল। ঘরে ঘরে উড়েছিল বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা। পরদিনের দৈনিক ইত্তেফাকে ‘শেখ মুজিবের নির্দেশ মানিয়া চলার সিদ্ধান্ত’ শিরোনামের খবরে জানানো হয়, বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা (সার্কেল অফিসার) শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

একাত্তরের ১০ মার্চ সকালে বঙ্গবন্ধু নিজ বাসভবনে একদল বিদেশি সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠকে বলেছিলেন, সাত কোটি বাঙালি আজ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন। যেকোনো মূল্যে তারা এই অধিকার আদায়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত বাঙালিরা অনেক রক্ত দিয়েছে। এবার আমরা এই রক্ত দেওয়ার পালা শেষ করতে চাই।’ ওই দিন বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে বলেন, ক্ষমতাসীন চক্র প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোবৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত। সামরিক সজ্জা অব্যাহত রেখে বাংলার বুকে এক জরুরি অবস্থা কায়েম রাখার প্রয়াসী। বঙ্গবন্ধুর বিবৃতিটি পরদিন দৈনিক সংবাদ প্রধান খবর হিসেবে ছেপেছিল ব্যানার হেডিংয়ে। শিরোনাম ছিল ‘মুক্তি অর্জনে বাংলার মানুষ অটল থাকিবেঃ মুজিব’।

১১ মার্চ ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় ‘পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা’ শিরোনামের একটি খবরে নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙালিদের বিক্ষোভের কথা উঠে আসে। ‘অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানে গিয়া শেখ মুজিবের সঙ্গে আলাপ করুন’ শিরোনামের আরেক খবরে তুলে ধরা হয় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানার আহ্বানে।

ওই দিন বিকেলে ওয়ালীপন্থী ন্যাপের উদ্যোগে শোষণমুক্ত স্বাধীন বাংলার দাবিতে ঢাকা নিউমার্কেট এলাকায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ। ন্যাপপ্রধান ওয়ালী খান করাচিতে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য ১৩ মার্চ ঢাকায় আসবেন। এসব খবর পরদিনের পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরে মাহফুজকে হত্যার মৌন সম্মতি তৈরি করা হয়েছে: নাহিদ

সেই ফাইয়াজের ভাই জাকসুর জিএস

পদত্যাগপত্রে যা লিখলেন অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম

জাকসুর ভিপি হলেন আব্দুর রশিদ জিতু, জিএস মাজহারুল ইসলাম

‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরেকটি প্রক্সি মওদুদীবাদী দলের দরকার নেই’, কাদের ইঙ্গিত করলেন উপদেষ্টা মাহফুজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত