Ajker Patrika

দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে খামারিরা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ জুন ২০২২, ১৫: ৫০
দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে খামারিরা

গোখাদ্য ও পোলট্রিসামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। ব্যয় কমাতে অর্ধেক খাবার দিচ্ছেন গরু ও মুরগিকে। কেউ আবার বিক্রি করে দিচ্ছেন। তারপরও আর্থিক ক্ষতি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, বৈশ্বিক কারণে দাম বেড়েছে। খামারিরা খাদ্য উৎপাদন করলে ব্যয় অনেক কমে যাবে।

জানা গেছে, কিছুদিন ধরে গো-খাদ্য ও পোলট্রি সামগ্রীর দাম চরমভাবে বেড়েছে। বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও কমে গেছে। আবার কেউ কেউ চাহিদা অনুযায়ী পণ্যও আমদানি করতে পারছেন না।

ব্যবসায়ীরা জানান, গমের ভুসি আগে ছিল ৪৫ টাকা কেজি। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ধানের কুড়া কেজি প্রতি ২ টাকা করে বেড়ে হয়েছে ১৬-১৭ টাকা। দাম বাড়ায় বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে। মুরগির খাবারের মধ্যে ব্রয়লার ফিড ২ হাজার ২০০ টাকার জায়গায় ৩ হাজার ২০০ টাকা। ২৫ টাকা কেজির গম বেড়ে হয়েছে ৪৫ টাকা, ভুট্টা ২৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা। সোনালি ফিডের দাম আগে ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা বস্তা। এখন বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৯৫৫ টাকা।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কলোনি এলাকার অ্যাপিসোড এগ্রো লিমিটেড নামে একটি গরুর খামারের ব্যবস্থাপক সাহেব আলী সরদার বলেন, অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম। ১ হাজার ২০০ টাকার ভুসি বস্তা এখন ১ হাজার ৯৫০ টাকা। খড়, ঘাসসহ সবকিছুর দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, খরচের পাল্লা বেড়ে যাওয়ায় খামারের ৩০টি গরু তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। খামারের তিনজন শ্রমিককে ছাঁটাই করেছেন। আগে গরুকে যতটা খাওয়ানো হতো তার অর্ধেক খাওয়ানো হয়। যে কারণে দুধও কম দেয়। দুধ বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে খাবারের অর্ধেক টাকাও হয় না।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের সজীব এগ্রো ফার্মের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, গত তিন বছর ধরে তিনি পোলট্রি ব্যবসা করছেন। তাঁর খামারে ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন হয়। পোলট্রি খাদ্য ও সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা এখন হতাশ। দাম বাড়ার পাশাপাশি ডিলাররা চাহিদামতো খাবারও সরবরাহ করতে না পারায় মুরগিকে অর্ধেক খাবার দেওয়া হয়। খাবারের মানও তেমন ভালো না। যে কারণে মুরগির গ্রোথ (স্বাস্থ্য) তেমন হচ্ছে না। আর মুরগির গ্রোথ না হওয়ায় খুচরা ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীরা মুরগি নিতে চান না।

তিনি আরও বলেন, খামারের মুরগি বেশি দিন রাখা যায় না। এ জন্য ১২৫ টাকা কেজি দরে মাইকিং করে খামারে থাকা মুরগিগুলো বিক্রি করছেন। এতে তাঁর অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে খামারটি করেছেন। এভাবে চলতে থাকলে তাঁদের পথে বসতে হবে। এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

রাজবাড়ী শহরের পোলট্রি ডিলার মেসার্স সালাম স্টোরের মালিক আব্দুস সালাম বলেন, পোলট্রি সামগ্রীর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের বেচাকেনা একদম নেই। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো বিক্রিই করতে পারেননি। দাম বাড়ার আগে এতক্ষণে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। তিনি আরও বলেন, ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি ১৪০ টাকা। এর সঙ্গে শ্রমিকদের বেতন যোগ করলে আরও বেশি হবে। সেভাবে খামারিরা বিক্রি করতে পারছেন না। সোনালি মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে। আগে ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা বস্তা। এখন হয়েছে ২ হাজার ৯৫৫ টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন ও আব্দুল আল মামুন বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের বেচাকেনা কমে গেছে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়েছে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা খায়ের উদ্দিন আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক কারণেই গো-খাদ্য ও পোলট্রি সামগ্রীর দাম বেড়েছে। আমাদের অঞ্চলে মানুষ সাধারণত ভুসি জাতীয় খাবার বেশি খাওয়ায়। গো-খামারিদের তাঁরা ঘাস উৎপাদনের পরামর্শ দিয়েছেন। এতে খরচ অনেক কমে যাবে। আর পোলট্রি খামারিদের অফিসে এসে পোলট্রি খাদ্য উৎপাদন শেখার জন্য বলেছেন। এ জন্য তাঁরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে খামারিদের সঙ্গে উঠানবৈঠক করছেন। বিনা মূল্যে মুরগির টিকা দেওয়ার কার্যক্রম নিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

এস আলমের জামাতার পেটে ৩৭৪৫ কোটি টাকা

হেফাজতের সমাবেশে জুলাইয়ের নারীদের গালিগালাজের নিন্দা জানাই: রিফাত রশিদ

ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নেই ১ শতাংশও

জামায়াতের ‘রোহিঙ্গা রাজ্যের প্রস্তাব’ প্রত্যাখ্যান করল মিয়ানমার সরকার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত