লাগামহীন সুতার দামে সংকটে বস্ত্র শিল্প

নরসিংদীর মাধবদীতে অব্যাহতভাবে সুতার দাম বাড়ার কারণে সংকটে পড়েছেন স্থানীয় বস্ত্র শিল্পমালিকেরা। শুধু গ্রে কাপড় উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল সুতার দাম নয়, বৃদ্ধি পেয়েছে টেক্সটাইল মেশিনের যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দামও। এতে কাপড় উৎপাদনের খরচ বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি কাপড়ের দাম। ফলে অব্যাহত লোকসানের মুখে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন অনেকে। আর বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন বস্ত্র খাতের হাজার হাজার শ্রমিক।

বস্ত্র শিল্পমালিকেরা জানান, মাধবদীতে ৬ হাজারের বেশি কারখানা রয়েছে। নরসিংদী এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে দেশের চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ কাপড় উৎপাদন হয়। শুধু মাধবদীতেই উৎপাদিত হয় ৭৫ শতাংশ গ্রে কাপড়। এই অঞ্চলের বস্ত্রের চাহিদা অনুযায়ী সুতার বেচাকেনা হয় মাধবদীতে। কিন্তু গত ছয়-সাত মাসে অধিকাংশ সুতার মূল্য বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে পাউন্ডপ্রতি সুতার দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ টাকা। এক বস্তা সুতা কিনতে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। এতে গজপ্রতি কাপড়ের উৎপাদন খরচ প্রায় ৩ টাকা বেড়ে গেলেও বাজারে মিলছে না কাপড়ের কাঙ্ক্ষিত দাম।

বস্ত্র শিল্পমালিকেরা সুতার লাগামহীন দামের জন্য সরকারের নজরদারির অভাবকে দায়ী করে বলেন, পণ্যের গায়ে নির্ধারিত মূল্য না থাকায় অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে সুতার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

মাধবদীর মনোহরপুরের এএস টেক্সটাইল মিলের মালিক গাজী সফিকুল ইসলাম জানান, সুতার বাজারের অস্থিরতার কারণে অনেকেই শুধু রাতের শিফটে মিল চালাচ্ছেন। সুতার বাজারদরের এই অবস্থা চলতে থাকলে এটাও বন্ধ করে দিতে হবে।

দোলন সাহা নামে আরেক শিল্পমালিক জানান, দেশের পোশাক শিল্পমালিকেরা বিদেশ থেকে বন্ডের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় সুতা আনার সুযোগসহ নানা রকম সুবিধা পাচ্ছেন। নিজেরা শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করলেও টেক্সটাইল মালিকদের সুতা আমদানিতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে তাঁরাই প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ান। ফলে টেক্সটাইল মালিকদের সুতা আমদানিতে সাড়ে ৩৭ শতাংশ শুল্ক গুনতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই দেশ থেকে সুতা কিনতে হয়। এই সুযোগ কাজে লাগান সুবিধাভোগী স্পিনিং মিলমালিকেরা।

তবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সুতার দাম বাড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করে সজীব ট্রেডার্সের মালিক উৎপল সাহা বলেন, করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বাজারে সুতার দাম বেড়েছে। এখানে সিন্ডিকেট করার প্রশ্নই আসে না।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দেশের বাজারে প্রচলিত সুতা তৈরির চেয়ে বিদেশে রপ্তানিমুখী সুতায় লাভ বেশি হওয়ায় স্পিনিং মিলমালিকেরা রপ্তানিমুখী সুতা তৈরির দিকে ঝুঁকছেন। এতে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুতার উৎপাদন না থাকায় সংকট বাড়ছে।