Ajker Patrika

নামহীন শহীদদের প্রতি

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৩ জুন ২০২২, ১০: ০০
নামহীন শহীদদের প্রতি

১৯৭১ সালের স্বাধিকার আন্দোলনে শুধু রাজনীতিবিদেরাই নন, যুক্ত হয়েছিলেন দেশের সব মানুষ। ১ মার্চ দেশের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ভাষণের পর সারা বাংলা হয়ে উঠেছিল বিক্ষুব্ধ।

টেলিভিশন, বেতার, চলচ্চিত্র, চারু ও কারুশিল্পীরাও নেমেছিলেন রাজপথে।

৬ মার্চ ঢাকার শিল্পীসমাজ বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী লায়লা আর্জুমান্দ বানুর সভাপতিত্বে একটি সমাবেশ করে। গঠিত হয় ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পীসমাজ’। ৫ মার্চ থেকেই শিল্পীরা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছিলেন। ৯ মার্চ তাঁরা মুক্তিসংগ্রামের চেতনাকে জাগ্রত করার শর্তে কর্মবিরতি শেষ করে কাজে যোগ দেন। ১২ মার্চ ঢাকার আর্টস কাউন্সিল গ্যালারিতে বিকেল ৪টায় চারু ও কারুশিল্পীদের সভা হয়। সেখানে মুর্তজা বশীর ও কাইয়ুম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১৬ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চারু ও কারুশিল্পী সংগ্রাম পরিষদ যে সমাবেশের আয়োজন করে, সেই সমাবেশে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও মুর্তজা বশীর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন। সভার পর যে মিছিল হয়, তাতে চারজন ছাত্রীর বুকে বহন করা হয় বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘স্বা-ধী-ন-তা’ শব্দটি।

২৫ মার্চের অপারেশন সার্চলাইটের পর যখন মনে হচ্ছিল সবকিছু ভেঙেচুরে যাচ্ছে, তখন মুর্তজা বশীর দেশেই লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সপরিবারে দেশত্যাগ করে প্যারিসে চলে যান। কিন্তু তাঁর মন খচখচ করতে থাকে। তাঁর মনে পড়ে, ১৬ মার্চ শহীদ মিনার থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত ‘স্বা-ধী-ন-তা’ বুকে ধারণ করে যে মিছিলটি হয়, তাঁর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। মনে একধরনের পাপবোধ আসে। ফ্রান্সের টেলিভিশনে কিংবা পত্রিকার পাতায় আত্মোৎসর্গীকৃত যুবকদের ছবি দেখে তিনি মর্মপীড়ায় ভুগতে শুরু করেন। ভাবেন, যাঁরা অকাতরে জীবন উৎসর্গ করছেন, তাঁদের নাম কোনো স্মৃতিস্তম্ভে উৎকীর্ণ হবে না। সবাই তাঁদের রাজনৈতিক কর্মীদের নাম লিপিবদ্ধ করবেন। সেই অজানা নামহীন শহীদদের উদ্দেশে মুর্তজা বশীর নিবেদন করলেন ৩৭টি চিত্রমালা, ‘এপিটাফ ফর দ্য মার্টারস’।

সূত্র: মুর্তজা বশীর, আমার জীবন ও অন্যান্য, পৃষ্ঠা ২৭৯,৩৪৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত