Ajker Patrika

অবৈধ জাল উৎপাদন চলছেই

শরীফ হাসান, দোহার (ঢাকা)
আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১২: ৪৭
অবৈধ জাল উৎপাদন চলছেই

ঢাকার দোহারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ চায়না জাল উৎপাদন কারখানা বন্ধ করেছিল প্রশাসন। তবে বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে আবার জাল উৎপাদিত হচ্ছে এসব কারখানায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, জয়পাড়া বাজারে হাজেরা ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় চায়না জালের উৎপাদন কারখানায় ২০-২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। একটু এগিয়ে অবকাশ সিনেমা হলের পেছন দিকে গেলেই দেখা মেলে শতাধিক পুরুষ ও নারী অবৈধ চায়না জাল উৎপাদন করছেন। তা ছাড়া জয়পাড়া লটাখোলায় চায়না জাল উৎপাদন কারখানায় অভিযান চালালেও সেটি আবার চলছে। এই উৎপাদিত জাল দোহারের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানোর কাজে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে মালিকপক্ষ। এসব জালের কাঁচামাল আড়াল করে কারখানায় আনা হয় রাতে। এই কারখানাগুলোয় বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে ভেতরে লোক দিয়ে কাজ করানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, মালিকেরা সবাইকে ম্যানেজ করেই অবৈধ চায়না জাল উৎপাদন কারখানা চালাচ্ছেন। বর্ষার মৌসুমে জালের চাহিদা বেশি থাকায় কয়েক মাস ধরে দোহারের বিভিন্ন স্থানে এই অবৈধ চায়না জাল উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে।

মাহমুদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আলমাস বলেন, ‘আমরা আগে ৫০ টাকার ছোট মাছ কিনলে এক দিন বা দুই দিন খেতে পারতাম। কিন্তু এখন এই চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার কারণে ছোট মাছ আর পাওয়া যায় না। যা-ও পাওয়া যায়, দাম অনেক বেশি। চায়না জাল ধ্বংস এবং কারখানা পুরোপুরি বন্ধ করা না হলে ভবিষ্যতে দেশীয় মাছ খাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, চায়না জাল উৎপাদন ও বিক্রি সরকারিভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাহলে এসব কারখানা চলে কীভাবে? এ কাজে যাঁরা জড়িত, তাঁরা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। এসব কারখানায় জাল প্রস্তুত করে আবার বিভিন্ন চায়না মোড়কে তা বাজারজাত করছে। অবৈধ কারখানার মালিকদের যাঁরা মদদ দিচ্ছেন, তাঁদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া উচিত। দ্রুত কারখানাগুলো বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে হাজেরা ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় কারখানার ব্যবস্থাপক ঈশ্বর কুমার বলেন, ‘আমরা লোন নিয়ে এই কারখানা দিয়েছি। আমরা তো ছোট পরিসরে কারখানা করেছি, অন্যরা বড় কারখানা করছে, তাতে তো কোনো দোষ নেই?’ গত বছর তো প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। তাহলে এখন কেন আবার চালাচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সমিতির মাধ্যমে এই চায়না জাল তৈরি করছি। আমাদের সব সুবিধা-অসুবিধা সমিতির লোকেরাই দেখেন।’

জয়পাড়া অবকাশ হলের পেছনের নিলু শেখের কারখানার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘অনেক টাকা ঋণ করে এই কারখানা দিয়েছি। আমাদের তৈরি জাল বৈধ; কারণ, এ জালের ফাঁকা আগেরটার চেয়ে বেশি, ফলে মাছের ডিম আটকা পড়ে না, শুধু মাছই আটকা পড়ে।’

এ বিষয়ে কথিত ওই সমিতির দোহার উপজেলা সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মাঝির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো কমিটি নাই, এ বিষয়ে কিছু জানি না। যে বলেছেন, তিনি ভুল বলেছেন।’ আপনি তো জয়পাড়া বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক, সে ক্ষেত্রে এই অবৈধ জাল কীভাবে বাজারে তৈরি হচ্ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অভিযান তো আর আমরা পরিচালনা করি না। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের, আমাদের না।’

এ প্রসঙ্গে দোহার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার বলেন, ‘চায়না জাল সরকার অবৈধ ঘোষণা করেছে, তাই সব সময় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কোথাও চায়না জাল উৎপাদিত হলে তথ্য দিন, আমরা অভিযান পরিচালনা করব।’

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলম বলেন, ‘আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।’ জয়পাড়ায় বিভিন্ন স্থানে এখনো চায়না জাল উৎপাদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত