Ajker Patrika

কৃষিতে ব্যয় বাড়ার শঙ্কা

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ৩৫
কৃষিতে ব্যয় বাড়ার শঙ্কা

সুনামগঞ্জে পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো আবাদের প্রস্তুতি। কাক ডাকা ভোর থেকে কৃষকেরা মাঠে কাজ শুরু করেন। কেউ বীজতলা তৈরিতে, কেউবা জমিতে হালচাষে ব্যস্ত। তবে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় উদ্বেগে আছেন কৃষকেরা। চাষাবাদ এখন সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে হচ্ছে। জমিতে সেচ দেওয়া, ধান কাটা-মাড়াইও ডিজেল এবং কেরোসিনের ওপর নির্ভর। এমন অবস্থায় উৎপাদন খরচ বাড়ার শঙ্কায় চাষিরা।

কৃষকেরা জানান, তেলের দামে কৃষকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে চাষাবাদ প্রযুক্তিনির্ভর। ধান কাটা থেকে শুরু করে মাড়াইও হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। এমন অবস্থায় ডিজেলের দাম বাড়ায় চাষাবাদে খরচ বেড়ে যাবে। খরচ বাড়লেও ধানের দাম না বাড়লে কৃষকদের লোকসানে পড়তে হবে।

এদিকে অনেক জমিই অনাবাদি থাকার শঙ্কা করছেন কৃষক আন্দোলনের নেতারা। কৃষি ও কৃষক সংগ্রাম পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক রমেন্দ্র কুমার দে মিন্টু বলেন, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ায় অনেক জমি অনাবাদি থাকবে। অনেকে চাহিদা অনুযায়ী চাষাবাদ করতে পারবেন না। তাই কৃষকদের জন্য ডিজেল ও কেরোসিনের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া দরকার।

সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার শাফেলা গ্রামের কৃষক লাল মিয়া বলেন, ‘জমিতে চাষ শুরু করতাছি। এবার ডিজেল কিনতাছি অনেক বেশি দাম দিয়া। যে টাকা খরচ কইরা ফসল ফলাইমু সেই অনুযায়ী যেন ধানের দাম পাই—এইটা আমাদের সরকারের কাছে চাওয়া।’

প্রতিবছরই কৃষিকাজে উৎপাদর খরচ বাড়ছে। বাড়তি টাকা দিয়ে শ্রমিক আনতে হয়। সব মিলিয়ে ধানের ভালো দাম পাওয়া যায় না। এ নিয়েও কৃষকের মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের খলাচানপুর গ্রামের কৃষক নিপেন্দ দাস বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ছে, আমরা এবার সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করমু। কারণ, আমরা এত দাম দিয়া তেল কিন্না চাষাবাদ করলে ধানের তেমন দাম পাই না।’

সদর উপজেলার বেড়াজালি গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই বলেন, ‘অন্য বছর যে পরিমাণ জমিতে ধান চাষ করতাম। এবার একটু কম করমু। এত দাম দিয়া ডিজেল কিন্না চাষাবাদ করার ক্ষমতা নাই।’

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সুনামগঞ্জ কৃষিনির্ভর জেলা। দাম বাড়লেও চাষাবাদ করতেই হবে। এবার যেহেতু ডিজেলের দাম বেড়েছে, সুতরাং উৎপাদন খরচও বাড়বে। তাই সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, কৃষকের কথা চিন্তা করে ধানের দাম যেন বাড়ানো হয়।’

এদিকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়লেও চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রায় কোনো ঘাটতি হবে না বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফরিদুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ডিজেলের দাম বাড়ুক আর যা-ই হোক, কৃষকেরা বসে থাকবে না। কৃষকেরা চাষাবাদ করবেই এবং আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে, সেটিও ঠিক থাকবে। কেননা কৃষিকাজের বিকল্প নেই।’

চলতি বছর সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত