Ajker Patrika

বিপর্যয় কাটিয়ে সম্ভাবনা

ফরিদ খান মিন্টু, শরণখোলা (বাগেরহাট)
আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ১৪
বিপর্যয় কাটিয়ে সম্ভাবনা

পানিতে তলিয়ে উপজেলার ৯০ ভাগ বীজতলা নষ্ট হলেও থেমে যায়নি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক। কেউ কেউ পুনরায় বীজতলা তৈরি করেছেন। কেউ আবার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে চড়া দামে বীজ কিনে রোপণ করছেন। বিপর্যয় কাটিয়ে এখন ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা।

গত আগস্টের মধ্য ভাগে বিরামহীন ভারী বর্ষণে শরণখোলার শতভাগ ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধের ত্রুটি ও প্রবহমান খালে স্লুইসগেট নির্মাণ না করায় ভারী বর্ষণ জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়। চলতি আবাদ মৌসুমে চাষিদের তৈরি বীজতলার কোথাও বুক সমান, কোথাও হাঁটু সমান পানি জমে যায়।

এ সময় ক্ষুব্ধ চাষিরা বেড়িবাঁধের কয়েকটি অংশ কেটে দিতে উদ্ধত হলে উপজেলা প্রশাসন দ্রুত পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেয়। জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ৯০ ভাগ বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চাষিদের মধ্যে হাহাকার দেখা দেয়। মৌসুমের উচ্চ ফলনশীল আমন ও উফশী ধানের চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

তবে প্রাকৃতিক এ বিপর্যয় দমাতে পারেনি শরণখোলার চাষিদের। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাষিদের কেউ কেউ দ্বিতীয়বারের মতো বীজতলা তৈরি করেন। কেউ পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া, ইন্দুরকানি, কচুয়া ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা থেকে বীজ সংগ্রহ করে রোপণ করেন। শরণখোলার আমড়াগাছিয়া, রাজাপুরসহ কয়েকটি বাজারে অস্থায়ীভাবে বীজ কেনা-বেচার হাটও বসে।

ইন্দুরকানি উপজেলার ছগীর মিয়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলার ছাইদুর রহমান ছোমেদ গোলদার বলেন, তাঁরা প্রতিদিন ট্রাক ও ট্রলারভর্তি বীজ এনে আমড়াগাছিয়া ও রাজাপুর বাজারসহ শরণখোলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেছেন।

উপজেলার সোনাতলা এলাকার চাষি মো. মজিবর ফরাজী বলেন, বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তাঁর তিন বিঘা জমির জন্য পিরোজপুরের ইন্দুরকানি থেকে ৭ পোন বীজ ৮ হাজার ৫০০ টাকায় কিনে এনে রোপণ করেন। বীজতলার অবস্থা দেখে ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করেন তিনি।

উপজেলার সাউথখালি ইউনিয়নের বকুলতলা গ্রামের চাষি মো. নুরুল হক বাবুল বলেন, এবার আট বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। অতিবৃষ্টির কারণে সমস্ত বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে নতুন করে বীজতলা করেন। এ ছাড়া কিছু বীজ কিনতে হয়েছে। সার-ওষুধ ও শ্রমিকের মজুরিতে বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৯০-১০০ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ৪ হাজার ৫০ হেক্টর স্থানীয় জাতের, ৫ হাজার ১৮০ হেক্টর উফশী, ২০ হেক্টর হাইব্রিডসহ মোট ৯ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৫০ স্থানীয় জাতের, ৪ হাজার হেক্টর উফশী, ১৬ হেক্টর হাইব্রিডসহ মোট ৭ হাজার ৮৬৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছে।

এদিকে বীজসংকট রোধে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের মধ্যে ন্যায্য মূল্যে ৬ টন বীজধান ও ৩০০ জন কৃষককে বিনা মূল্যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসিবুল ইসলাম মনি জানান, উপজেলার অনেক চাষি পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন। কিছু চাষি দ্বিতীয়বারের মতো বীজতলা তৈরি করে আমন চাষ করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত বলেন, অতিবর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় শরণখোলায় এবার ফসলহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। শরণখোলার অদম্য চাষিরা তা ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথা সময়ে পদক্ষেপ নেওয়ায় ও কৃষি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যার কারণে শরণখোলার চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে এ উপজেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

গুমে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে পরবর্তী ঘোষণার আগপর্যন্ত বাংলাদেশি সব ফ্লাইট বাতিল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত