Ajker Patrika

প্রবাসে বাঙালিয়ানা

রহমান মৃধা
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২২, ০৯: ৪৬
প্রবাসে বাঙালিয়ানা

প্রায় ৪০ বছর বিদেশে কর্মজীবন আমার। তা-ও হাইটেকনোলজির সঙ্গে জড়িত থেকে, একজন ইন্ডাস্ট্রি প্রোভাইডার এবং পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি, দিকনির্দেশনা দিয়েছি। তা সত্ত্বেও বাগান করা এবং কৃষিকাজ আমাকে মুগ্ধ করে চলেছে, এটা আমার নিজের কাছেও অবাক লাগছে! কী জাদু আর কী মধু রয়েছে এই কৃষিকাজে, যা অন্য কিছুতে নেই?

মনে হচ্ছে এত বছর যা কিছু করেছি, আর এখন যা করছি তার মধ্যে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। কৃষিকাজের মধ্যে মজাই আলাদা। বীজ বপন, ফল রোপণ থেকে শুরু করে ফুল এবং ফল ফলানো, সেগুলোকে নিজ হাতে যত্ন করে উৎপাদন করা, তুলে খাওয়া—হোয়াট অ্যান এক্সিলেন্ট অ্যান্ড ওয়ান্ডারফুল এক্সাইটমেন্ট! এ সত্যি এক চমৎকার অনুভূতি, যা শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করার মতো।

যদিও পাইলট প্ল্যান্ট প্রজেক্ট, তারপর বাংলাদেশের শাকসবজির চাষ সুইডেনের মতো শীতের দেশে—এটাই চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা এবং তাকে ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা, কখনো একা, কখনো সহধর্মিণীর সঙ্গে আবার কখনো সুইডিশদের সঙ্গে; সে যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি। সর্বোপরি সেই ছোটবেলায় দেশে থাকাকালে ভেজালমুক্ত শাকসবজির স্বাদ নতুন করে ফিরে পাওয়া দূর পরবাসে, ভাবতেই গা শিউরে ওঠে! ভাবনা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। লালশাক, পালংশাক, লাউয়ের আগা, ডগা, পাতা এবং ধরছে শত শত লাউ—এ অনুভূতি শুধু হৃদয় বুঝবে।

বাংলাদেশে বসবাসরত অনেকের কাছে হয়তো মনে হবে, এটা একটা ঘটনা হলো? কিন্তু ভাবুন, ৪০ বছর দেশের বাইরে, সবকিছু থেকে বঞ্চিত, হঠাৎ সেই অতীতের স্মৃতি, সঙ্গে সেই প্রিয় খাবারের জিনিসগুলো নিজের হাতে উৎপাদন করা এবং রান্না করে খাওয়া, একটু ভাবুন, প্লিজ! মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি সুইডিশদের বাংলা খাবার খাওয়ানো শেখাচ্ছি বাংলা কায়দায়। সরাসরি হাত দিয়ে খাওয়া—এটা নিজের দেশকে তুলে ধরার একটি চমৎকার সুযোগ। নানা ধরনের সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করা, বাইরের পরিবেশে বাংলা কায়দায় সুইডেনের মাটিতে—কী মনে হয়? আর কিছু না হোক, যদি কখনো কোনো বাংলাদেশির সঙ্গে তাদের নতুন পরিচয় হয়, চাকরি থেকে শুরু করে অন্য কোনো দরকারে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে কৃপণতা করবে না তারা। যাদের সঙ্গে এত বছর সময় কাটালাম, তারা মনে করবে আমাকে, আমার জন্মভূমিকে, জন্মভূমির অতিথিপরায়ণতাকে, সে বিশ্বাস আমার আছে।

আমি মনে করি, আমরা যারা দেশের বাইরে আছি, আমরা চাই সব সময় নানাভাবে ভালো কাজের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে। এতে করে নতুন প্রজন্ম যখন উচ্চশিক্ষার্থে, চাকরির সুবাদে বিদেশে আসবে, তারা সব সময় একটি পজিটিভ ফিডব্যাক শুরু থেকে পাবে। আমি নিজেকে গর্বিত বাংলাদেশি মনে করি। কারণ, আমি পরের দেশে এসে, পরকে আপন করে নিতে পেরেছি আমার কর্মের মধ্য দিয়ে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি, ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবারে পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬, ভারতে ১০

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত