Ajker Patrika

ট্রেনের গতি কমেছে, সেবার মান নিয়েও সন্তুষ্ট নন যাত্রীরা

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২১, ১০: ৪৪
ট্রেনের গতি কমেছে, সেবার মান নিয়েও সন্তুষ্ট নন যাত্রীরা

বিনিয়োগ বেড়েছে রেলে। চলছে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প। কিন্তু যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ে বলছে, যাত্রীসেবার মান আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে যাত্রীরা সন্তুষ্ট নন। সবচেয়ে বড় অভিযোগ ট্রেনের টিকিট নিয়ে। এ ছাড়া আছে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, লাইনচ্যুতির ঘটনা। ফলে যাত্রীরাও সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আগে ট্রেনের গতি যেখানে ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, বর্তমানে তা ৫০ থেকে ৫৩ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। কোথাও এই গতি নেমেছে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারের নিচে। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ইঞ্জিনই মেয়াদোত্তীর্ণ, যেনতেনভাবে উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, দুর্নীতি, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, সর্বোপরি রেলে বিশাল জনবলের সংকট। যার প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ছে যাত্রীসেবার ওপর।

এই অবস্থার মধ্যে আজ ১৫ নভেম্বর রেল দিবস পালিত হচ্ছে। গত বছর প্রথমবারের মতো এই দিনটি পালিত হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলছেন, ‘যাত্রীসেবার মান আগের তুলনায় এখন অনেক বেড়েছে। সেবার মান আরও বাড়াতে বাংলাদেশ রেলওয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এখন আমাদের টার্গেট স্টেশনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সঠিক সময়ে ট্রেন পরিচালনা করা।’

আরামদায়ক মনে করে অধিকাংশ যাত্রীই রেলকে বেছে নেন ভ্রমণের জন্য। আতিকুল ইসলামের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। ঢাকা থেকে অসুস্থ মাকে নিয়ে চট্টগ্রাম যাবেন। ট্রেনের কেবিন চান। দুই দিন ধরে ট্রেনের কেবিনের কোনো সিট পাননি। টিকিট কাউন্টার থেকে বলা হয়েছে, কোনো কেবিন খালি নেই। আতিকুল ইসলাম বলেন, জরুরি সময়ে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারেনি রেল। তাহলে বছরের পর বছর টাকা খরচ করে ট্রেন চালু রেখে লাভ কী?

কমলাপুর স্টেশনে শরিফুল আলম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় কিছুটা নিরাপদ এবং ভাড়া কম, তাই ট্রেনে যাতায়াত করি। কিন্তু সরকারি এ বাহনে সেবার মান আগের থেকে বাড়েনি। ট্রেনের ভেতরের পরিবেশ খুব একটা উন্নত হয়নি। অপরিষ্কার থাকে ট্রেনের শৌচাগার। খাবারের মান যথেষ্ট খারাপ।’

সেবার মান বাড়াতে রেল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় কিনেছে নতুন কোচ। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে সেগুলো যাত্রীসেবার মান বাড়াতে কাজে আসেনি। স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের উন্নত সেবা দিতে ২০১৩ সালে ২০ সেট ডেমু ট্রেন কেনা হয়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বেশির ভাগ ডেমু নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে যাও দু-একটা চলছে, তাতে যাত্রীরা যথাযথ সেবা পান না।

যাত্রীসেবার মান না বাড়লেও লোকসানের খাতা থেকে নাম কাটাতে পারেনি রেলওয়ে। গত এক যুগে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে রেল। বর্তমানে ৩৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হয়নি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘দীর্ঘসময় রেল অবহেলিত ছিল। সরকার এখন রেলে মনোযোগী হয়েছে এবং বরাদ্দ দিচ্ছে। তাঁরা এখন রেলের কোচ, ইঞ্জিন ও অবকাঠামো নির্মাণে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ট্রেনের যাত্রীসেবার সঙ্গে জড়িত স্টেশন, প্ল্যাটফর্ম, ওয়েটিং রুম, ট্রেনের খাবার, বাথরুম এসবের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত রেলের।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত