Ajker Patrika

বেসরকারিতে কমে সরকারিতে বেড়েছে

রবিউল আলম, ঢাকা
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ২০
বেসরকারিতে কমে সরকারিতে বেড়েছে

এক দশক আগেও দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীরা দলে দলে এ দেশে আসতেন। সে সময় দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি হয়েছেন। তবে এরপর বছর যত গড়িয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর পড়াশোনার হার তত কমেছে। তবে বেড়েছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি, টিউশন ফিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে অধিক ব্যয়, আবাসিক ও অবকাঠামোসংকট, নিরাপত্তার অভাব প্রভৃতি কারণে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দিন দিন কমছে। তবে প্রথম সারির কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির হার আগের মতোই রয়েছে। এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি আবাসিক সুবিধা, বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা গঠন, কম টিউশন ফি ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধার কারণে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর ভর্তির হার বাড়ছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ৫৫টি সরকারি ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিশ্বের ২৬টি দেশের শিক্ষার্থীরা ২০২০ সালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, গাম্বিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, মৌরিতানিয়া, তানজানিয়া, অস্ট্রিয়া, রুয়ান্ডা, জিবুতি, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান ও বাহারাইন।

ইউজিসি সূত্র বলেছে, ২০১১ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ১ হাজার ৮৭১ জন বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশে আসেন। এর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ১ হাজার ৬৫১ জন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ২১০ জন। পরবর্তী চার বছরে বেসরকারিতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৭০০ জনের মাঝামাঝি থেকেছে। ২০১৮ সালে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা আগের তুলনায় দ্বিগুণ হলেও বেসরকারিতে কিছুটা কমেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে ৭৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে এই সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে মাত্র ৮৩ জন। তবে বেসরকারিতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক দশক আগের তুলনায় বেশ খানিকটা কম। অবশ্য সার্বিকভাবে দেশে এখনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশে মোট ২ হাজার ৩১৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন ১ হাজার ৫৫০ জন।

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগ) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছিল না। এখন নীতিমালা হয়েছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং এ বিষয়ে উৎসাহ দিচ্ছে। পাশাপাশি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ধরনের কিছু বিভাগ খোলা হয়েছে, যেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্য আগ্রহী হচ্ছেন। অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ফরেন ডরমিটরি নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

তবে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন না হওয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও সংখ্যা কমছে বলে মনে করেন মুহাম্মদ আলমগীর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত