Ajker Patrika

যৌবন ফিরছে কপোতাক্ষের

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২২, ১১: ৩১
যৌবন ফিরছে কপোতাক্ষের

‘নদ কাটা হয়ি গেলি, পানি থাকপে। জোয়ার-ভাটা হবে। আবার আমরা কপোতাক্ষ নদে মাছ ধরতি পারব। তা বেইচে বাপ–দাদাদের মতো সংসার চালাতি পারব। এভাবে আশার কথা বলছিলেন বিষ্টুপদ হালদার। তিনি ঝিকরগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ পাড়ের গঙ্গানন্দপুর গ্রামের মালোপাড়ার বাসিন্দা।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় নদের ৫ কিলো পুনরায় খননকাজ শুরু হয়েছে। উপজেলার মাগুরা ফুলতলা গ্রাম থেকে খননকাজ শুরু করেছে যশোরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএএনসিএমএস (জেভি)।

সম্প্রতি শুরু হওয়া প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের ২ জুন পর্যন্ত, যার ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯০৭ টাকা। খননের গড় প্রস্থ প্রায় ৪৫ দশমিক ৫৫ মিটার এবং গড় গভীরতা ১ দশমিক ৪০ মিটার। এ ছাড়া খননের তলা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ মিটার।

ফুলতলা গ্রামের বাসিন্দা বিষ্টুপদ হালদারের সঙ্গে কথা হয়। বিষ্টুপদ হালদার বলেন, ‘কপোতাক্ষ নদ ভরাট হয়ে গত দেড় যুগ ধরে মাছ শিকার করা যায় না। নদে জোয়ার-ভাটা নেই।’

বিষ্টুপদ হালদার আরও বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে একেবারেই পানি থাকে না। বাপ-দাদারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মাছ ধরতে না পেরে মাছ কিনে বিক্রি করে সংসার চালাই।’

উপজেলার বল্লা গ্রামের ফুল মিয়া বলেন, ‘নদ কাটা শুরু হয়েছে শুনে ভালো লাগছে। নদ আমাদের বাঁচা-মরার বিষয়। আশা করি, কপোতাক্ষ নদ আবার আমাদের আশীর্বাদে পরিণত হবে।’

উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কওসার আলী বলেন, ‘কপোতাক্ষ নদ খননের কথা শুনে আশার আলো দেখছি। তবে যদি নদ সম্পূর্ণ খনন না করা হয়, তবে পানি বের হতে না পেরে আমাদের এ অঞ্চল ডুববে।’

২০০০ সালে সেপ্টেম্বর মাসে ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানিতে সৃষ্ট বন্যা ও নদের উপচে পড়া পানিতে এ অঞ্চল ডুবে গিয়েছিল। এর পর থেকে কপোতাক্ষ নদের জোয়ার-ভাটা বন্ধ হওয়ায় বর্ষাকালে নদের উপচে পড়া পানিতে পাড়বাসী জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আর শুষ্ক মৌসুমে একেবারে পানি শুকিয়ে যায়। এর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কপোতাক্ষ নদ দখল। নদের পার দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে পাকা স্থাপনা, খনন করা হয়েছে ইচ্ছেমতো পুকুর-জলাশয়। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে নদ বাঁচাতে আন্দোলনে নামে ‘কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটি’।

কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির ঝিকরগাছা শাখার সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘নদ খালের মতো করে শুধু খনন করলে হবে না। এর সঙ্গে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, নদের জায়গা নদে ফিরিয়ে দেওয়া ও মাথাভাঙ্গায় উজানের সঙ্গে সংযোগ নদ সংযোগ করে দিতে হবে। তাহলে কপোতাক্ষ আবার যৌবন ফিরে পাবে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএএনসিএমএস’র (জেভি) কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা সবুজ হোসেন বলেন, ‘খননকাজ ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নদে পানি বেশি থাকায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে পানি কমে যাওয়ায় প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে।’

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় কপোতাক্ষ নদ শুধু ঝিকরগাছায় না, মোট ৭৯ কিলোমিটার নদ পুনঃখনন করা হবে।’

কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের অন্যতম বড় নদ। নদীটি চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। এ নদের উৎপত্তি চুয়াডাঙ্গা জেলার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে এবং এটি পরে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় ভৈরব ও কপোতাক্ষ দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় কাছে শিবসা নদীতে গিয়ে পতিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ২৩৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৫০ মিটার (৪৯০ ফুট), গভীরতা ৩ দশমিক ৫ থেকে ৫ মিটার (১১.৫ থেকে ১৬.৪ ফুট)। ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ নদ অবস্থিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত