Ajker Patrika

বধ্যভূমিতে বখাটের আড্ডা

শামিমুজ্জামান, খুলনা
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ২৩
বধ্যভূমিতে বখাটের আড্ডা

নির্মাণের ১০ বছরেও পূর্ণতা পায়নি খুলনা মহানগরী সংলগ্ন গল্লামারি বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধ। এর কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। রাতের আঁধারে এখানে বসে বখাটেদের আড্ডা। এ নিয়ে সচেতন মহল ও মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, গল্লামারি বধ্যভূমি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন। ওই সময় পাক সেনা কিংবা তাদের দোসর রাজাকার ও আলবদরেরা মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এখানে এনে হত্যা করতো। এই সব মানুষের স্মরণে বটিয়াঘাটা উপজেলার গল্লামারী বধ্যভূমির তিন একর জমিতে ক্ষুদ্র পরিসরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয় ১৯৯৫ সালে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে পূর্ণাঙ্গ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু করে খুলনা জেলা পরিষদ।

২০১১ সালে ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বর্তমান স্মৃতিসৌধটি উদ্বোধন করা হয়। ওই সময় মাস্টারপ্ল্যানের মধ্যে ছিল সীমানা প্রাচীর, লাইব্রেরি, অ্যাপ্রোচ রোড, পার্কিং ইয়ার্ড, সীমানা প্রাচীর, গেট, গার্ড ও ওয়েটিং রুম, রেস্টুরেন্ট, বৃক্ষরোপণ ও ফুলের বাগান তৈরি, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন ও ফোয়ারা। কিন্তু গত ১০ বছরের মধ্যে তার কিছুই হয়নি।

এই নিয়ে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভ। এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার অধ্যাপক মো. আলমগীর কবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে স্বাধীনতাকামী হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির মুখে এখানে ১৯৯৫ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে স্মৃতিসৌধ হয়। ২০১১ সালে স্মৃতিসৌধটি উদ্বোধন করা হয়। তবে মাস্টার প্ল্যান অনুয়ায়ী সবকিছু বাস্তবায়ন হয়নি এখনো।

কবে হবে তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। জমি নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টি পানি জমি। এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা মানুষ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এখানে নেই রেস্ট হাউস। হয়নি লাইব্রেরি। সীমানা প্রাচীর নেই। রাতের আঁধারে বখাটেরা আড্ডা দেয় এই পবিত্র ভূমিতে।

এদিকে খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমান্ডার সরদার মাহবুবর রহমান বলেন, বধ্যভূমি আরও দৃষ্টিনন্দন করা যেতো। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার কারণে তা হয়নি। তিনি বধ্যভূমির মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের দাবি জানান। তিনি আরও বলেন, রাতে এখানে বখাটেরা আড্ডা দেয়। এমন খবর শুনলে খারাপ লাগে।

স্থানীয় ফজলুল হক বলেন, সীমানা প্রাচীর না থাকায় স্মৃতিসৌধ চত্বরে অনাকাঙ্ক্ষিত লোকজনের পদচারণা, গবাদি পশু চারণ এবং মাদকসেবীদের আড্ডায় সৌধের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতা নষ্ট হচ্ছে। এখানে থাকা উন্মুক্ত মঞ্চটি এখন আর ব্যবহার উপযোগী নেই। মেঝে ফেটে গেছে। মঞ্চ দেয়ালটিও খসে পড়ছে।

অপরদিকে জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ পূর্ণাঙ্গতার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা হয়েছে।

অপরদিকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, ২ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে আরও ১৬ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৪ টাকা যোগ করে মূল স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। নকশা অনুযায়ী বাকি কাজ সম্পন্ন করতে আরও ৯ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ অর্থ পেলে সৌধটির পূর্ণতা দেওয়া সম্ভব হবে। এখানে সীমানা প্রাচীর দিতে না পারায় মাদকসেবীদের আড্ডা হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি। বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধটি পূর্ণাঙ্গতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে আনতে পারলে এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত