Ajker Patrika

নাটকের শক্তি

সৈয়দ শামসুল হক
আপডেট : ২১ মে ২০২২, ১১: ৫৪
নাটকের শক্তি

মুক্তিযুদ্ধের একটি শ্রেষ্ঠ অর্জন মঞ্চনাটক। একটা সময় ছিল, যখন মঞ্চনাটকে অনেক সাহসী সংলাপ শোনা যেত। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর দেশের সংস্কৃতি যখন আবার পাকিস্তানমুখী করার পাঁয়তারা চলল, তখনো জ্বলে উঠেছিল মঞ্চনাটক। এরশাদের শাসনামলেও বাধার সম্মুখীন হয়েও নাটকের মাধ্যমে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ।

খালেদা জিয়ার শাসনামলে সৈয়দ শামসুল হক লিখেছিলেন ‘মুখোশ’ নামে একটি নাটক। মুক্তিযুদ্ধ তার প্রধান উপজীব্য। নিউ বেইলি রোড বহু আগেই নাটক সরণি নাম ধারণ করেছে। নাটকটির প্রথম অভিনয় হবে মহিলা সমিতি মঞ্চে। দর্শকেরা আসতে শুরু করেছেন। নাট্যকারও এসেছেন নিজের গাড়িতে করে। গাড়িটা রেখেছেন রাস্তার এক ধারে। এ রকম অনেকেই রেখেছেন গাড়ি।

সৈয়দ হক একসময় লক্ষ করলেন, মহিলা সমিতির সামনে কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশের অদ্ভুত তৎপরতা শুরু হয়েছে। যে গাড়ি আসছে, সে গাড়িকেই হটিয়ে দিচ্ছে তারা। ওয়াকিটকি হাতে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, ‘গো গো, হঠাও গাড়ি, হঠাও!’

সৈয়দ হক এগিয়ে যান নিজের গাড়ির দিকে। সেই ‘হঠাও’ বলা পুলিশের হাতের ধাক্কায় তিনি পড়ে যান ফুটপাতে। বিকার নেই পুলিশ কর্মকর্তার। তিনি ‘গো গো’ বলতে বলতে অন্য আরেকটি গাড়ির দিকে এগিয়ে যান।

মাটি থেকে উঠে সৈয়দ হক জিজ্ঞেস করেন, ‘এখানে কী হয়েছে?’

ইংরেজির ভান্ডার খুব একটা পোক্ত ছিল না পুলিশটির। তিনি আঞ্চলিক বাংলায় বলতে থাকেন কথা এবং সে কথার বেশির ভাগই গালিগালাজ। সৈয়দ হক তা সাধু বাংলায় অনুবাদ করে লিখেছেন এভাবে, ‘এখানে ভগ্নীপ্রেমিকেরা নাটক করে, উহাদের পশ্চাৎ সম্ভোগ করিতে হয়।’

এ কথা বলতে বলতে সৈয়দ শামসুল হকের গাড়িতে লাঠির আঘাত করেন পুলিশটি।

জানা গেল, খালেদা জিয়া সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় মিলনায়তনের সামনে দাঁড়ানো সবগুলো গাড়ি আটক করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন।

দৈনিক সংবাদ শিরোনাম করেছিল: ‘মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক, তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রোষানল’।

সূত্র: সৈয়দ শামসুল হক, হৃৎকলমের টানে, পৃষ্ঠা ৩৮০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত