Ajker Patrika

হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করা হয়েছে চিকিৎসার সনদে

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৯: ৫৯
হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করা হয়েছে  চিকিৎসার সনদে

বনানীর একটি হোটেলে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মামলায় ভিকটিমদের চিকিৎসা-সনদ দেওয়া হয় বেআইনিভাবে। হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে এই সনদ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ এ ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়েছে বলে মেডিকেল সনদে দেখা গেছে।

ধর্ষণ-সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রতিবেদনে (মেডিকেল রিপোর্ট) কোনো ভিকটিমের ‘অতীত শারীরিক সম্পর্ক অভিজ্ঞতা’ না লিখতে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ও এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। অথচ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ ওই নির্দেশনাকে পাশ কাটিয়ে বনানী রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষিত দুই ভিকটিমের চিকিৎসাসংক্রান্ত পরীক্ষার প্রতিবেদনে শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে মতামত দিয়েছে। ডা. সোহেল মাহমুদ ২০১৭ সালের ১ জুন ওই প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিকটিমদের জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে তাঁদের শারীরিক সম্পর্কের অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে হাইকোর্ট ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে বলে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগের এই প্রতিবেদন উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষার শামিল।

এ ছাড়া দুই আঙুল দিয়ে পরীক্ষা করা হয় ওই দুই ভিকটিমকে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের একই আদেশে নির্দেশনা রয়েছে, দুই আঙুল দিয়ে ভিকটিমের পরীক্ষা করা যাবে না। এমনকি এই মামলার পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণার সময় বিচারক পর্যবেক্ষণেও চিকিৎসা সনদের সেই অসম্মানজনক শব্দ তুলে ধরেন।

ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোসাম্মাত কামরুন্নাহার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘এই মামলার চিকিৎসাসনদ থেকে দেখা যায়, জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি চিকিৎসাসনদে উল্লেখ করা হয়েছে অতীত শারীরিক সম্পর্কে তাঁরা অভ্যস্ত। তারপরও এই মামলায় অভিযোগপত্র কীভাবে দেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়।’

সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু এ প্রসঙ্গে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ মানতে সবাই বাধ্য। চিকিৎসক বা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দুই ভিকটিমের চিকিৎসাসনদে বা প্রতিবেদনে যা উল্লেখ করেছেন তা অপরাধ।

তবে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার লিখিত রায়ে পুলিশের প্রতি কোনো নির্দেশনা নেই। ধর্ষণ ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নিতে কোনো পরামর্শও পুলিশকে দেওয়া হয়নি লিখিত রায়ে। তবে প্রাথমিক রায়ে পুলিশের প্রতি মামলা না নেওয়ার নির্দেশনার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে ওই বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করে একই বছরের ৮ জুন পুলিশ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ১১ নভেম্বর এই মামলার রায় দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর তৎকালীন বিচারক মোসাম্মাত কামরুন্নাহার। রায়ে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, তাঁর বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনকে বেকসুর খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত