Ajker Patrika

স্যার ক্লাস নেন না

সাবেরা মুস্তাফা
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৫০
স্যার ক্লাস নেন না

সাবেরা মুস্তাফার নাটকের প্রতি ছিল আগ্রহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। সে বছরই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নাটকে অভিনয় করেছিলেন। এর আগপর্যন্ত ছাত্ররাই নারীর ভূমিকায় অভিনয় করতেন। বিশাল এক ক্লাসরুমের মেঝেতেই তৈরি হলো মঞ্চ। বিভাগীয় অধ্যাপক আলী আহসান নিয়েছিলেন উদ্যোগ। সে বছর প্রথম বর্ষে বাংলা অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন মাত্র দুজন। সাবেরা মুস্তাফা আর লুতফুল হায়দার চৌধুরী।

‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর প্রথম স্বর্গের অংশ আর বনফুলের ‘কবয়ঃ’ কাব্যনাট্যের অভিনয় হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। ‘মেঘনাদবধ’-এ চিত্রাঙ্গদা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সাবেরা মুস্তাফা। কবয়ঃ নাটকে রাজকন্যা চন্দ্রমুখীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জহরত আরা।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন বাংলার বিভাগীয় প্রধান। তিনি বক্তৃতা দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করার সময় নারী অভিনয়শিল্পীরা অন্য একটি ক্লাসরুমে আত্মগোপন করে ছিলেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চলে যাওয়ার পর নাটক দুটি মঞ্চস্থ হলো। এই প্রথম মেয়েদের চরিত্রে মেয়েদের অভিনয় দেখে সবাই তা প্রাণভরে উপভোগ করলেন।

মাত্র দুজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রথম বর্ষের অনার্স ক্লাস হতো। একদিন সাবেরার এক ইয়ার সিনিয়র সন্জীদা খাতুন বিভাগীয় প্রধান ও অন্য অধ্যাপকদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলেন। নিয়ে গেলেন সাউথ বিল্ডিংয়ে বিভাগীয় প্রধানের ঘরে। ‘ক্লাস কেমন চলছে’ জিজ্ঞেস করলেন বিভাগীয় প্রধান। সাবেরা বললেন, ‘শহীদুল্লাহ স্যার তো আমাদের ক্লাসই নেন না!’ একবার নয়, তিনবার বললেন তিনি। সন্জীদা খাতুন ছোটখাটো ধাক্কাই দিলেন। কিন্তু সাবেরা বুঝতে পারলেন না, সমস্যাটা কী?

তখন সেই বিভাগীয় প্রধান বললেন, ‘ওর মনের মধ্যে এখন আমিই বিরাজ করছি তো, আঁ, তাই ও বারবার আমার নামটাই উচ্চারণ করছে, আঁ।’

সাবেরা লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন। তিনি আসলে অধ্যাপক আহমদ শরীফের কথা বলতে গিয়ে ভুলে বারবার উচ্চারণ করছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নাম!

সূত্র: সাবেরা মুস্তাফা, আমারে তুমি অশেষ করেছ, পৃষ্ঠা ১৯৫-১৯৭

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত