Ajker Patrika

বিশ্বের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

রহমান মৃধা
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৮: ২৮
বিশ্বের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলো নাগরিকদের জীবনের সার্বিক উন্নতির জন্য সব সময় নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করে। এরা বিভিন্ন বিষয়ে জরিপ করে কীভাবে দেশ এবং জনগণকে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করা যায়। সম্প্রতি সুইডেনের স্টকহোমের পৌরসভার একটি জরিপে লিডিংও (Lidingö) শীর্ষে, তাবি (Täby) দ্বিতীয় এবং নাক্কা (Nacka) তৃতীয় স্থানে রয়েছে। অন্যদিকে, ওরে (Åre) ও ইস্তাদ (Ystad) পৌরসভা নিচের দিকে এবং উপপ্লান্ডসভ্রু (Upplands-Bro) সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। আমি বর্তমানে উপপ্লান্ডসভ্রুতে বসবাস করছি।

লিডিংও পৌরসভা সুইডেনের সেরা পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং স্টকহোম অঞ্চলে প্রথম স্থানে রয়েছে। সুইডেনের পৌরসভাগুলো বসবাসের মান নির্ধারণে চারটি দিক বিবেচনা করেছে: প্রাইভেট ফাইন্যান্স, নিরাপত্তা, শিক্ষার সুযোগ এবং স্বাস্থ্যসেবা। এ ছাড়া পরিবেশগত দিকও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইভেট ফাইন্যান্স: ব্যক্তিগত আর্থিক স্থিতিশীলতা মানুষের জীবনে সুরক্ষা ও মানসিক শান্তি নিশ্চিত করে। এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করে। প্রতিকার হিসেবে নাগরিকদের আর্থিক শিক্ষায় প্রশিক্ষণ, ট্যাক্স নীতি সহজতর করা এবং বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানো যেতে পারে।

নিরাপত্তা: মানুষের জীবনে নিরাপত্তা অপরিহার্য। এটি মানসিক শান্তি, আস্থা এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। প্রতিকার হিসেবে পুলিশ বাহিনীকে শক্তিশালী করা, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অপরাধ দমনে কঠোর আইন প্রয়োগ করা উচিত।

শিক্ষার সুযোগ: শিক্ষার সুযোগ মানুষের ব্যক্তিগত উন্নতি এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়ক। প্রতিকার হিসেবে শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো, বৃত্তি প্রদান এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যেতে পারে।

স্বাস্থ্যসেবা: স্বাস্থ্যসেবা মানুষের জীবনের অন্যতম প্রধান প্রয়োজন। প্রতিকার হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন, সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমা নিশ্চিত করা এবং চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়ন করা উচিত।

পরিবেশ: একটি পরিচ্ছন্ন ও সবুজ পরিবেশ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। পরিষ্কার বাতাস, পানীয়জল এবং সবুজ এলাকার প্রাচুর্য নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। 

বাংলাদেশে সত্যিকারের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে হিংসা ও প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে। ভালো কাজ করার চেয়ে কে কাকে কত ঠকাবে, তার প্রতিযোগিতা বেশি দেখা যায়। তাই বহির্বিশ্বের ভালো দিকগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দুর্নীতি দমন। দুর্নীতিকে উপেক্ষা না করে জব্দ করতে প্রযুক্তির ব্যবহারসহ কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো রকম আপস যেন না করা হয়।

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতির জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো গুরুত্বপূর্ণ: 

শিক্ষার মান উন্নয়ন: শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার প্রসার ঘটানো।
নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন এবং কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করা। 
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা: ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগের জন্য ঋণসুবিধা ও আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ক্যাশলেস বাংলাদেশ তৈরি করা জরুরি।
স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন: স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন। 
পরিবেশ রক্ষা: পরিবেশের সুরক্ষা ও সংরক্ষণে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন।
সামাজিক সচেতনতা: সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং জনগণকে নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা। 
বিনিয়োগ আকর্ষণ: বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে বিনিয়োগবান্ধব নীতি প্রণয়ন।
মানবিক নৈতিকতা: মানবিক নৈতিকতা ও সততার গুরুত্বকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। দুর্নীতি এমন একটি সমস্যা, যা দেশকে শীর্ষ থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করে। দুর্নীতি দমন করতে না পারলে বাংলাদেশ কখনোই একটি সৃজনশীল এবং সৎ দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। এ জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারসহ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। 

আগেই বলেছি, বহির্বিশ্বের ভালো দিকগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ তার সার্বিক উন্নতি করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন ইতিবাচক মনোভাব এবং সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের পরিবর্তে সহানুভূতিশীল ও সহযোগিতামূলক মনোভাব গড়ে তোলা জরুরি।
সুইডেনের মতো দেশগুলো তাদের উন্নয়ন-প্রক্রিয়া চলমান রাখে। বাংলাদেশ যদি এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে এবং ধারাবাহিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়, তবে এটি একটি উন্নত ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত