Ajker Patrika

ভোটে জেতার জন্য খরচ ও তা তোলা

সম্পাদকীয়
ভোটে জেতার জন্য খরচ ও তা তোলা

সত্য কথা অকপটে বলার সৎ সাহস সবার থাকে না। কিন্তু বর্তমান সংসদের একজন স্বতন্ত্র সদস্য কোনো রাখঢাক না করে সত্য কথা বলার সাহস দেখিয়েছেন। কী সত্য তিনি বলেছেন? আজকের পত্রিকায় শুক্রবার প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এখন সেই টাকা তুলে নিতে চান। এ জন্য অন্যায় করা লাগলেও তিনি সেটা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন!

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে লালপুর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে দেওয়া তাঁর বক্তব্যের একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে জেলাজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

অবশ্য এমপি আবুল কালাম আজাদের দাবি, তাঁর বক্তব্যের পুরোটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসেনি। এ জন্য ভুল বোঝার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-১ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুলকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যে এমপি আবুল কালামকে বলতে শোনা যায়, ‘বিগত পাঁচ বছরের (বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে) বেতন-ভাতার ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না। আর ভবিষ্যতে থাকবেও না। তবে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে (দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে), যা আমি তুলব। এটা আমি তুলব, যেভাবেই হোক। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।’

এমপি আরও বলেছেন, দশম জাতীয় সংসদে এমপি হওয়ার জন্য তাঁর একটি টাকাও খরচ হয়নি। কারণ তিনি সেবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেবার তিনি ট্যাক্স-ফ্রি গাড়ি কিনেছিলেন ২৭ লাখ টাকা দিয়ে। ইচ্ছা করলে তিনি ১ কোটি টাকা দিয়েও গাড়ি কিনতে পারতেন। কিন্তু তাঁর টাকা না থাকায় ২৭ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন।

তিনি হয়তো মনে মনে ভাবছেন, তখন বেশি দামে গাড়ি কিনে বিক্রি করে লাভবান না হওয়াটা ভুল হয়েছিল। কারণ দেখা গেছে, যাঁরা এমপি বা মন্ত্রী হয়েছেন, তাঁদের সম্পদ বেড়েছে শত গুণ নয়, কারও কারও হাজার গুণও।

এবার এমপি আবুল কালাম আর ভুল করবেন না। তিনি নির্বাচনে তাঁর ব্যয় হওয়া ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা তুলবেন এবং সে জন্য যদি কিছু অন্যায়-অনিয়মও করতে হয়, সেটাও করবেন। এর বাইরে আর কোনো টাকা তিনি তুলবেন না বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটাই-বা কম কী!

এই স্পষ্ট ভাষণের জন্য তাঁর প্রশংসা করা যেত, যদি তিনি একই সঙ্গে এটাও বলতেন যে তাঁকে যাঁরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, সেই ভোটারদের জন্য তিনি কী কী করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত