Ajker Patrika

উদ্ধার ও ত্রাণসংকটে বিপর্যস্ত সিরিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
উদ্ধার ও ত্রাণসংকটে বিপর্যস্ত সিরিয়া

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেল। এখনো খোঁজ মেলেনি অনেকের। একদিকে চলছে উদ্ধারকাজ। আরেক দিকে জীবিত ব্যক্তিদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। তুরস্কে এ দৃশ্য এখন স্বাভাবিক হলেও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত আরেক দেশ সিরিয়ায় নেমে এসেছে আরেক বিপর্যয়। ভারী ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে একদিকে উদ্ধার তৎপরতা ঠিকমতো চালানো যাচ্ছে না, অন্যদিকে ত্রাণসামগ্রীর সরবরাহ না থাকায় জীবিত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও খাদ্যসহায়তা মিলছে না। এ পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন সিরিয়ার সরকারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের উদ্ধারকারী বাহিনী হোয়াইট হেলমেট।

হোয়াইট হেলমেটের কর্মকর্তা ওবাদাহ আলওয়ান বিবিসিকে বলেন, চারদিকে এলোমেলো পরিস্থিতি। পুরোনো সব যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আধুনিক ও ভারী উপকরণ না থাকায় ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজ বারবার ব্যাহত হচ্ছে। আবার যাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হচ্ছে, তাদের খাদ্য ও চিকিৎসাসহায়তা ঠিকমতো দেওয়া যাচ্ছে না।

গত সোমবারের জোড়া ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা পর্যন্ত মোট মৃত্যু ২৩ হাজার ছাড়িয়েছে। তুরস্ক জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ভূমিকম্পে মারা গেছে ১৯ হাজার ৩৮৮ জন। আহত হয়েছে ৭৭ হাজার ৭১১ জন। আর সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৩৭।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকালও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। যত দ্রুত সহায়তা পাঠানোর আশা করা হয়েছিল, তত দ্রুত সহায়তা যায়নি বলে স্বীকার করেছেন তিনি। গতকাল বিধ্বস্ত এলাকা দেখতে আলেপ্পোতে যান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।

সিরিয়ার সরকারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের উদ্ধারকারী বাহিনী হোয়াইট হেলমেট দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ আলেপ্পোতে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনার দায়িত্বে আছে। ভূমিকম্পে সিরিয়ার এ প্রদেশটিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। যুদ্ধে বিপর্যস্ত দেশটি বর্তমানে আরও বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি রয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হেলমেট।

এরই মধ্যে গতকাল তুরস্কে গেছে জাতিসংঘের দ্বিতীয় দফা সহায়তার লরি। তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তে দেখা যায় এসব লরি। জাতিসংঘের সংস্থা আইওএম বলছে, ১৩টি লরি পাঠিয়েছে তারা। এসব লরিতে তাঁবু, কম্বল, গদি এবং ইনসুলেটর রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে মেডিকেল কিট ও খাদ্য।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো সহায়তা যায় দেশটিতে। আল জাজিরা বলছে, গতকাল ফ্রন্টলাইনে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দিয়েছে সিরিয়া সরকার। এতে সংকট কিছুটা কেটে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

ভূমিকম্পে যারা বেঁচে গেছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের মানবিক সহায়তার জন্য ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। সংস্থাটির মতে, দুই দেশে ক্ষতিগ্রস্তদের মোট সংখ্যা ৮ লাখ ৭৪ হাজার।

এদিকে গতকালও ধ্বংসস্তূপ থেকে ‘বিরল’ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ তুরস্কের ইস্কেন্দেরুনে ধ্বংসস্তূপের নিচে ১০১ ঘণ্টা আটকে থাকা একই পরিবারের ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। ভেঙে পড়া ভবনের ছোট একটি জায়গায় তাঁরা ছিলেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল জাজিরা।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় গত সোমবার ভোরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। পরে দুপুরেও আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে গুঁড়িয়ে যায় দুই দেশের হাজার হাজার হাসপাতাল, স্কুল ও অ্যাপার্টমেন্ট ভবন। এতে গৃহহীন হয়ে পড়ে বিপুলসংখ্যক লোক। উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ১০ প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন। একের পর এক সহায়তা আসছে দেশটিতে। তবে ঠিকমতো সহায়তা না আসায় সমালোচনা চলছে এরদোয়ান সরকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত