Ajker Patrika

টিকতে পারছে না হাস্কিং মিল

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২১, ১২: ৫৬
টিকতে পারছে না হাস্কিং মিল

স্বয়ংক্রিয় চালকলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছোট ছোটচালকল বা হাস্কিং মিল। সংকট দেখা দিয়েছে শ্রমিকের। এ কারণে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হাস্কিং মিলগুলো।

একাধিক মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক হাস্কিং মিল মালিক মূলধন হারিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। আবার অনেকে টিকতে না পেরে তাঁদের চালকল ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। কেউ কেউ চাতালগুলোতে চালের পরিবর্তে ধানের চিটা থেকে গুঁড়া তৈরি করছেন। আর শ্রমিকেরা জীবিকার তাগিদে চলে গেছেন অন্য পেশায়।

উপজেলা খাদ্য গুদাম ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় কাগজে-কলমে ৩৩টি হাস্কিং মিল আছে। তবে এর বাইরে আরও ২০টি হাস্কিং মিল রয়েছে। এসব চালকলে প্রায় দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতো। বর্তমানে এসব হাস্কিং মিলের পাশাপাশি উপজেলায় ১টি অটো রাইস মিল বা স্বয়ংক্রিয় চালকল আছে। চাল প্রক্রিয়াজাত কল রয়েছে একটি। হাস্কিং মিলগুলোর অর্ধেকের বেশিই বন্ধ হয়ে গেছে; যেগুলো চালু আছে, সেগুলোর অবস্থা নাজুক।

হাস্কিং মিলের নারী শ্রমিক জাবেদা খাতুন বলেন, ‘ছোট থেকেই চালকলে কাজ করছি। আমাদের এই কলে ৬ থেকে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। চাতালে ধান ভিজানো ও শুকানো থেকে শুরু করে ভাঙানো পর্যন্ত কাজ করা হয়। আগে পারিশ্রমিক হিসাবে প্রতিদিন ৫০০ টাকা এবং খাওয়ার জন্য চাল দেওয়া হতো। এখন আগের মতো কাজ নাই। যে কাজ করি তাতে প্রতিদিন ২০০ টাকাও হাজিরা হয় না।’

চাতালের শ্রমিক আব্দুল রহিম বলেন, ‘যে টাকা পাই, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয়। এক সময় অনেক মানুষ কাজ করতেন চাতালে। এখন চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। মিলের শ্রমিকেরা এখন কৃষিকাজ, ভ্যান চালানো কিংবা ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। আমরা অন্য কোনো কাজ জানি না। তাই চাতালেই পড়ে আছি।’

উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের হাবিব চালকল ও চাতালের মালিক মো. সেলিম হোসেন বলেন, ‘৩০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। একটা সময় আমার মিলে প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৮ জন শ্রমিক কাজ করতেন। কিন্তু বর্তমানে শ্রমিক সংকটে চাতাল বন্ধ রয়েছে।’

মিল মালিক মান্নান বিশ্বাস বলেন, ‘শ্রমিকের বড় অভাব। কেউ এখন চাতালে কাজ করতে চান না। প্রতি বছর ব্যবসায় লস দিতে দিতে আমাদের পুঁজি শেষ। অটো রাইস মিল আসার পর আমাদের চাহিদা নাই বললেই চলে।’

উপজেলা হাস্কিং মিলের সভাপতি মো. মাহবুব-উল-আহসান উল্লাস বলেন, উপজেলায় বর্তমানে ৩৫টি হাস্কিং মিল আছে। এর মধ্যে চালু আছে ১৮ থেকে ২০টি। সব থেকে বেশি সংকট শ্রমিকের।

উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামশেদ ইকবালুর রহমান বলেন, ‘উপজেলায় ৩৩টি হাস্কিং মিলের মধ্যে ৭টি বন্ধ আছে। একটি অটো মিল রয়েছে। চাল প্রক্রিয়াজাতকরণের কল আছে একটি। গতবার এলাকার হাস্কিং ও অটো মিলগুলো থেকে ১ হাজার ৭১১ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও তা পূরণ হয়নি। এবার সরকার প্রান্তিক মিলগুলো থেকে চাল ও ধান সংগ্রহ করছে। এতে হাস্কিং মিল মালিকেরা লাভবান হবেন বলে আশা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত