Ajker Patrika

ব্যায়ামবীরের প্রতিনিধি

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ২০: ৩৭
ব্যায়ামবীরের প্রতিনিধি

পটুয়া কামরুল হাসান খুব শ্রদ্ধা করতেন তাঁর গুরু জয়নুল আবেদিনকে। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সেই সময় কলকাতায় মুসলমানদের মধ্যে কারও কারও নামডাক হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন গায়ক আব্বাসউদ্দীন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা। এই কাতারেই যুক্ত হলো জয়নুল আবেদিনের নাম।

সে সময় ‘ইনিই যে জয়নুল আবেদিন’ সে কথা রাস্তা-ঘাটের মানুষকে জানানোর একটা ছেলেমানুষি তাগিদ অনুভব করতেন কামরুল হাসান। হয়তো ট্রামে করে দুজন যাচ্ছেন। তখন উচ্চগ্রামে এমনভাবে কথা বলতেন কামরুল যে আশপাশের সবাই যেন বুঝতে পারে, কামরুল যাঁর পাশে বসে যাচ্ছেন, তিনি হচ্ছেন জয়নুল আবেদিন।

কামরুলের খুব ইচ্ছে, জয়নুল আবেদিন যেন কামরুলকে তাঁর ছাত্র হিসেবে পরিচিত করিয়ে দেন। কিন্তু জয়নুল আবেদিন কামরুলকে পরিচয় করিয়ে দিতেন এভাবে, ‘একে চিনলেন না? এর নাম কামরুল। ওই যে ব্যায়াম প্রদর্শনীতে সেদিন কনুই দিয়ে ডাব ভেঙে দেখাল।’

এ কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যেত কামরুল হাসানের। জয়নুলের ছাত্র হিসেবে পরিচিতি না পেয়ে ব্যায়ামবীর হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠলেন কামরুল হাসান।

কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে ব্যায়ামের যে প্রতিযোগিতা হয়েছিল, তাতে আর্ট স্কুল থেকে অংশ নিয়েছিলেন কামরুল। অন্য প্রতিযোগীদের প্রায় সবাই অবস্থাপন্ন হিন্দু ঘরের সন্তান, রোলস রয়েস বা শ্রভ্রলেট হাঁকিয়ে আসেন তারা, শরীরে মাখেন সেন্টেট অলিভ অয়েল। গা মোছেন টার্কিশ তোয়ালে দিয়ে। কামরুলের সঙ্গে থাকত একটা সাধারণ গামছা আর সরিষার তেল।

প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলেন কামরুল। সে সময় নিয়ম ছিল, কলেজের কোনো শিক্ষক প্রতিযোগীর প্রতিনিধি হবেন। কিন্তু কামরুলের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না বলে ট্রফিটি সেদিন তাঁর হাতে দেওয়া হয়নি। পরদিন জয়নুল আবেদিন এলেন প্রতিনিধি হয়ে। তাঁর কল্যাণেই হাতে পেলেন ট্রফি। কামরুলের জীবনে এটি একটি অনেক বড় গর্বের বিষয় ছিল।

সূত্র: কামরুল হাসান, বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও আমার কথা, পৃষ্ঠা ৮৩-৮৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত