Ajker Patrika

মৈত্রী পাইপলাইন

সম্পাদকীয়
মৈত্রী পাইপলাইন

ভারত থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য নির্মিত প্রথম আন্তসীমান্ত পাইপলাইন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৮ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করে একে দুই দেশের সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় বলে অভিহিত করেছেন নরেন্দ্র মোদি। আর শেখ হাসিনা একে সহযোগিতার নতুন মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন। বলা হচ্ছে, এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিয়ে একদিকে বাংলাদেশের জ্বালানির সংকট দূর হবে, অন্যদিকে এতে বাংলাদেশ আর্থিকভাবেও লাভবান হবে। ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে মেঘনা পেট্রোলিয়াম ডিপোতে এই জ্বালানি তেল জমা হওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ১৭টি জেলার কৃষি, পরিবহনসহ প্রয়োজনীয় নানা ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।

নিশ্চয়ই এই পাইপলাইন প্রতিষ্ঠা প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের আরেকটি উদাহরণ তৈরি করল। পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ নেওয়া জ্বালানি তেলের মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেক কম পড়বে বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে, ভারত কোনো তেল উৎপাদনকারী দেশ নয়। তাই সরবরাহকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের তেলের মূল্য বেড়ে গেলেও তা বাংলাদেশের বাজারে প্রাপ্য তেলের মূল্যের চেয়ে বেশি হবে না তো? কিংবা কোনো কারণে ভারতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি হ্রাস পেলেও তারা তাদের অভ্যন্তরীণ মজুত থেকে সমন্বয় করে বাংলাদেশে তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখবে? অথবা কোনো কারণে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়ে গেলেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে পাইপলাইনে তেল সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখা হবে? প্রশ্নগুলো অনুমাননির্ভর, তবে অযৌক্তিক নয়।

বাংলাদেশ ও ভারত বর্তমানে প্রায় অভিন্ন উৎস থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিশোধনাগার না থাকায় পরিশোধিত তেলের স্থানীয় চাহিদার একটি বিরাট অংশই বাংলাদেশকে অন্য তৃতীয় দেশ থেকে পরিশোধন করিয়ে অথবা সরাসরি অধিক মূল্যে আমদানি করতে হয়, যেমনটি এখন ভারত থেকে করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের আশু কর্তব্য হবে দেশে জরুরি ভিত্তিতে নতুন জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার স্থাপন কিংবা স্থাপিত শোধনাগারের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক দিন দিন নতুন মাত্রা পাচ্ছে, এটা নিঃসন্দেহে স্বস্তির বিষয়। বর্তমানে ভারত থেকে বাংলাদেশ ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সংকট নিরসনে ভারতকে পাশে পাওয়া অবশ্যই ভালো। আবার ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানির খবরটি কিন্তু জনস্বার্থেই উদ্বেগের। দুই দেশের সুসম্পর্কের ভিত্তি হতে হবে আস্থা ও বিশ্বাস। এটা মনে করা হয়ে থাকে যে ভারতের কোনো সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যতটা আন্তরিকতা দেখানো হয়, ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ ঠিক ততটা আন্তরিকতা পায় না। এ প্রসঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন, বাণিজ্য ঘাটতি এবং সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিষয়গুলো উল্লেখ করা যায়।

আমরা আশা করব, বাংলাদেশের প্রত্যাশার বিষয়গুলো ন্যায্যতার ভিত্তিতেই ভারতের কাছ থেকে সুবিবেচনা পাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত