অফিসে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। তবু পা টিপে টিপে রাস্তাটা পার হচ্ছিলাম। নিমতলীর ম্যানহোলটা দিয়ে প্রায়ই ময়লা পানি উপচে আসে। বাসার সামনে থেকে সহজে রিকশা পাওয়া যায় না বলে সংক্ষিপ্ত রাস্তাটা ব্যবহার করতে হয় প্রধান সড়কে যাওয়ার জন্য। যা-ই হোক, বিছানো ইটের ওপর পা ফেলে ফেলে চলতে হচ্ছিল। হঠাৎ পেছন থেকে এসে সাত-আট বছর বয়সী এক পিচ্চি তার কোলে আরেক বছরখানেকের বাচ্চাকে নিয়ে ধপধপ করে হেঁটে গেল। সেখানেই আমার পা টিপে রাস্তা পার হওয়ার বাসনা খতম! পায়ের সঙ্গে কাপড়ও ভিজল সুয়ারেজের পানিতে। সেখানে কেমন পানি থাকে, জানেন নিশ্চয়ই?
অগত্যা বাসায় ফিরে পুনরায় প্রস্তুতি নিয়ে অন্য রাস্তায় রওনা হলাম। সেদিন অফিসে পৌঁছাতে বেশ দেরি হয়েছিল। যানবাহন পেতে যথেষ্ট সময় খরচ হয়েছিল এবং সেই সঙ্গে ট্রাফিক জ্যাম তো একদম ফ্রি!
এক যুগের বেশি সময় ধরে ঢাকায় বাস করছি। এর আগে রাজধানীতে নিয়মিত যাতায়াত তো ছিলই। এই শহরের মোটামুটি অনেকখানি পরিবর্তন খেয়াল করতে পারি। নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে পরিবেশদূষণও বেড়েছে। শব্দ আর বায়ুদূষণে যথাক্রমে শাহবাগ ও গুলশান এগিয়ে আছে, সে কথা সাম্প্রতিক গবেষণা বলে দিচ্ছে।
আমার এক যুগের অর্ধেকটা সময় বাস করেছি নতুন ঢাকায়, বাকি সময় ধরে থাকছি পুরান ঢাকায়। আপনারাও নিশ্চয়ই জানেন এবং মানেন যে দুই অঞ্চল দুই রকমের। রূপে-গুণে ভিন্ন! মানে, নতুন ঢাকা যতটা ঝাঁ- চকচকে, ঠিক তার উল্টো হচ্ছে পুরান ঢাকা। পুরান ঢাকায় যতটা ঐতিহ্য, আপ্যায়ন টিকে আছে, নতুনে তা নগণ্য বললে ভুল হবে কি?
সাংবাদিকতা করতে গিয়ে ঢাকা শহরের কত অজানা রাস্তা জানা হয়েছে, তার হিসাব নেই। তবে গলি-ঘুপচির শহরটাকে এখনো জানতে ঢের বাকি। খালি চোখে বছরের পর বছর ধরা পড়েছে এসব রাস্তার ময়লার ভাগাড়গুলো। যেখানে-সেখানে আমরা তো নিত্য ময়লা ফেলছিই। এর কোনো বিকল্প দৃশ্য দেখি না। নতুন ঢাকার দিকটায় তা-ও কিছুটা পরিচ্ছন্ন রাস্তা পাওয়া যায়। কিন্তু পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় ময়লার স্তূপ দেখা যায়। এমনও অলিগলি আছে, যেখানে রাস্তার পাশে ময়লার বিশাল স্তূপের কারণে যানবাহন চলাচল করতে সমস্যা হয়। মানুষের চলাচলের কথা কী আর বলব! এসব রাস্তায় কিন্তু ময়লা ফেলার কথা না। এসব আবাসিক জায়গার রাস্তা ময়লার ভাগাড়ের জন্য না। সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাঁরা ময়লা-আবর্জনা ছোট ট্রলিতে করে নিয়ে আসেন, তাঁরাই কোনো না কোনো রাস্তার মোড়ে এসব ফেলে রাখেন। সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাক পুরান ঢাকার সব সরু গলিতে ঢুকতে পারে না। মধ্যরাতে এসে রাস্তার ওপর ফেলে রাখা ময়লার স্তূপ নিয়ে যায়। সকাল হতে হতে আবার ওই সব রাস্তায় ময়লার স্তূপ জমে যায়। সরাতে সরাতে ফের মধ্যরাত। এভাবে নিত্যদিন চলে যায়। নতুন ঢাকায় এমন ঘটনা চোখে পড়েনি।
পুরান ঢাকার নালাগুলো থাকে খোলা, কোনো ঢাকনা নেই। নতুন ঢাকার কোথাও এমন দেখিনি। সব বাড়ির সামনে দিয়ে খোলা নালা। কেউ কেউ রডের তৈরি জালি বিছিয়ে রেখেছে। কেউ সিমেন্টের ছোট পাটাতন বিছিয়ে দিয়েছে। পুরান ঢাকার কয়েকজন বাসিন্দাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এখানকার নালায় ঢাকনা নেই কেন? উত্তর পেলাম, সিটি করপোরেশন থেকে নালাগুলো পরিষ্কার করার সময় ঢাকনা ভেঙে ফেলে। আর সংস্কার করে দেয় না। বাড়ির মালিকেরা নিজেদের গাঁটের পয়সা বারবার খরচ করে ঢাকনা বসাতে চান না। আবার দেখেছি, নালার ময়লা তুলে তুলে আবার নালার পাশেই রেখে দেওয়া হয়। এখানেও ছোটখাটো স্তূপ হয়ে থাকে। নালার পানি বেড়ে গেলে তা ম্যানহোল দিয়ে উপচে আসে এবং আমার মতো বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অনেককে। একটু বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই।
করোনার সময়টায় একটা সুবিধা হয়েছে—আমরা মাস্কের ব্যবহারটা রপ্ত করতে পেরেছি। ময়লার ভাগাড়ের সামনে দিয়ে গেলে খানিকটা রক্ষা পাওয়া যায়। তবে ঠিক ভাগাড়ের সামনে যদি জ্যামে বসে থাকেন, তাহলে আপনার কষ্ট আমরা বুঝি। পুরো শহরে এখন ভাগাড়ের সংখ্যা বেড়েছে; বিশেষ করে বেশ কিছু ফ্লাইওভারের নিচে এগুলোর জায়গা হয়েছে। আশপাশের রাস্তায় জমে থাকে ময়লার পানি। ময়লার ট্রাক যখন রাস্তা দিয়ে যায়, ময়লার পানি ফেলতে ফেলতেই যায়। ময়লায় ডুবে থাকি আমরা। ভাগাড়ের শহরেই আমাদের বাস।
লেখক: সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন, সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
অফিসে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। তবু পা টিপে টিপে রাস্তাটা পার হচ্ছিলাম। নিমতলীর ম্যানহোলটা দিয়ে প্রায়ই ময়লা পানি উপচে আসে। বাসার সামনে থেকে সহজে রিকশা পাওয়া যায় না বলে সংক্ষিপ্ত রাস্তাটা ব্যবহার করতে হয় প্রধান সড়কে যাওয়ার জন্য। যা-ই হোক, বিছানো ইটের ওপর পা ফেলে ফেলে চলতে হচ্ছিল। হঠাৎ পেছন থেকে এসে সাত-আট বছর বয়সী এক পিচ্চি তার কোলে আরেক বছরখানেকের বাচ্চাকে নিয়ে ধপধপ করে হেঁটে গেল। সেখানেই আমার পা টিপে রাস্তা পার হওয়ার বাসনা খতম! পায়ের সঙ্গে কাপড়ও ভিজল সুয়ারেজের পানিতে। সেখানে কেমন পানি থাকে, জানেন নিশ্চয়ই?
অগত্যা বাসায় ফিরে পুনরায় প্রস্তুতি নিয়ে অন্য রাস্তায় রওনা হলাম। সেদিন অফিসে পৌঁছাতে বেশ দেরি হয়েছিল। যানবাহন পেতে যথেষ্ট সময় খরচ হয়েছিল এবং সেই সঙ্গে ট্রাফিক জ্যাম তো একদম ফ্রি!
এক যুগের বেশি সময় ধরে ঢাকায় বাস করছি। এর আগে রাজধানীতে নিয়মিত যাতায়াত তো ছিলই। এই শহরের মোটামুটি অনেকখানি পরিবর্তন খেয়াল করতে পারি। নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে পরিবেশদূষণও বেড়েছে। শব্দ আর বায়ুদূষণে যথাক্রমে শাহবাগ ও গুলশান এগিয়ে আছে, সে কথা সাম্প্রতিক গবেষণা বলে দিচ্ছে।
আমার এক যুগের অর্ধেকটা সময় বাস করেছি নতুন ঢাকায়, বাকি সময় ধরে থাকছি পুরান ঢাকায়। আপনারাও নিশ্চয়ই জানেন এবং মানেন যে দুই অঞ্চল দুই রকমের। রূপে-গুণে ভিন্ন! মানে, নতুন ঢাকা যতটা ঝাঁ- চকচকে, ঠিক তার উল্টো হচ্ছে পুরান ঢাকা। পুরান ঢাকায় যতটা ঐতিহ্য, আপ্যায়ন টিকে আছে, নতুনে তা নগণ্য বললে ভুল হবে কি?
সাংবাদিকতা করতে গিয়ে ঢাকা শহরের কত অজানা রাস্তা জানা হয়েছে, তার হিসাব নেই। তবে গলি-ঘুপচির শহরটাকে এখনো জানতে ঢের বাকি। খালি চোখে বছরের পর বছর ধরা পড়েছে এসব রাস্তার ময়লার ভাগাড়গুলো। যেখানে-সেখানে আমরা তো নিত্য ময়লা ফেলছিই। এর কোনো বিকল্প দৃশ্য দেখি না। নতুন ঢাকার দিকটায় তা-ও কিছুটা পরিচ্ছন্ন রাস্তা পাওয়া যায়। কিন্তু পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় ময়লার স্তূপ দেখা যায়। এমনও অলিগলি আছে, যেখানে রাস্তার পাশে ময়লার বিশাল স্তূপের কারণে যানবাহন চলাচল করতে সমস্যা হয়। মানুষের চলাচলের কথা কী আর বলব! এসব রাস্তায় কিন্তু ময়লা ফেলার কথা না। এসব আবাসিক জায়গার রাস্তা ময়লার ভাগাড়ের জন্য না। সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাঁরা ময়লা-আবর্জনা ছোট ট্রলিতে করে নিয়ে আসেন, তাঁরাই কোনো না কোনো রাস্তার মোড়ে এসব ফেলে রাখেন। সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাক পুরান ঢাকার সব সরু গলিতে ঢুকতে পারে না। মধ্যরাতে এসে রাস্তার ওপর ফেলে রাখা ময়লার স্তূপ নিয়ে যায়। সকাল হতে হতে আবার ওই সব রাস্তায় ময়লার স্তূপ জমে যায়। সরাতে সরাতে ফের মধ্যরাত। এভাবে নিত্যদিন চলে যায়। নতুন ঢাকায় এমন ঘটনা চোখে পড়েনি।
পুরান ঢাকার নালাগুলো থাকে খোলা, কোনো ঢাকনা নেই। নতুন ঢাকার কোথাও এমন দেখিনি। সব বাড়ির সামনে দিয়ে খোলা নালা। কেউ কেউ রডের তৈরি জালি বিছিয়ে রেখেছে। কেউ সিমেন্টের ছোট পাটাতন বিছিয়ে দিয়েছে। পুরান ঢাকার কয়েকজন বাসিন্দাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এখানকার নালায় ঢাকনা নেই কেন? উত্তর পেলাম, সিটি করপোরেশন থেকে নালাগুলো পরিষ্কার করার সময় ঢাকনা ভেঙে ফেলে। আর সংস্কার করে দেয় না। বাড়ির মালিকেরা নিজেদের গাঁটের পয়সা বারবার খরচ করে ঢাকনা বসাতে চান না। আবার দেখেছি, নালার ময়লা তুলে তুলে আবার নালার পাশেই রেখে দেওয়া হয়। এখানেও ছোটখাটো স্তূপ হয়ে থাকে। নালার পানি বেড়ে গেলে তা ম্যানহোল দিয়ে উপচে আসে এবং আমার মতো বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অনেককে। একটু বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই।
করোনার সময়টায় একটা সুবিধা হয়েছে—আমরা মাস্কের ব্যবহারটা রপ্ত করতে পেরেছি। ময়লার ভাগাড়ের সামনে দিয়ে গেলে খানিকটা রক্ষা পাওয়া যায়। তবে ঠিক ভাগাড়ের সামনে যদি জ্যামে বসে থাকেন, তাহলে আপনার কষ্ট আমরা বুঝি। পুরো শহরে এখন ভাগাড়ের সংখ্যা বেড়েছে; বিশেষ করে বেশ কিছু ফ্লাইওভারের নিচে এগুলোর জায়গা হয়েছে। আশপাশের রাস্তায় জমে থাকে ময়লার পানি। ময়লার ট্রাক যখন রাস্তা দিয়ে যায়, ময়লার পানি ফেলতে ফেলতেই যায়। ময়লায় ডুবে থাকি আমরা। ভাগাড়ের শহরেই আমাদের বাস।
লেখক: সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন, সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৩ ঘণ্টা আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৬ ঘণ্টা আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫