Ajker Patrika

জেএসএসের হাজারো নেতা-কর্মী আত্মগোপনে

হিমেল চাকমা, রাঙামাটি
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ১২
জেএসএসের হাজারো নেতা-কর্মী আত্মগোপনে

চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা-কর্মীদের নামে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ঘটনায় করা হয়েছে অর্ধশতাধিক মামলা। এরপর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে জেএসএস-শূন্য রাঙামাটি। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ সব নেতা এখন আত্মগোপনে রয়েছেন।

১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন জেএসএস সশস্ত্র সদস্যরা। চুক্তি অনুযায়ী, তাঁদের পুনর্বাসন করার কথা। কিন্তু কারও পুনর্বাসন করা হয়নি। চুক্তির দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে একাধিক আঞ্চলিক দল গঠন করা হয়েছে। এসব দলের কোন্দলে নিহত হয়েছেন বহু মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, জেএসএসের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু লারমা) ছাড়া বাকি কারও দু-তিন বছর ধরে দেখা মিলছে না রাঙামাটি শহরে। শুধু জেএসএস কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রথম সারির শতাধিক নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাঁদের অধিকাংশই অস্ত্র জমাদানকারী শান্তিবাহিনীর সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া জেএসএস ও সহযোগী সংগঠনের এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মী আত্মগোপনে গেছেন। তাঁদের অধিকাংশই তরুণ।

গত ৫ নভেম্বর রাঙামাটিতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় সন্তু লারমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু ২৪ বছর হতে চলেছে, চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কোনো সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না।’ সন্তু লারমা আরও বলেন, ‘শুধু তা-ই নয়, পার্বত্য চুক্তির পরেও অপারেশন-উত্তরণ জারি করে সেনাশাসন বলবৎ রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি-উত্তর অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।’

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, পাহাড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা থাকায় জেএসএস নেতা–কর্মীরা আত্মগোপনে গেছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কয়েক শ তরুণ। তাঁরা হয়তো প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

জেএসএস জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা বলেন, ‘আমাদের এক হাজারের অধিক নেতা-কর্মীর নামে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার কারণে আমাদের অনেকে আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছে। তারা সবাই দেশের ভেতরে আছে। শুধু গ্রেপ্তার এড়াতে তারা জেলা, উপজেলা ও থানা শহরে আসছে না। এসব সদস্য ও তাদের পরিবার দুর্বিষহ জীবন পার করছে। মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু করা হচ্ছে না।’

পাহাড়ে বৃহৎ এ আঞ্চলিক দলটি সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি করেছিল। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ীও হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে হাজারো নেতা-কর্মী আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন বলেন, ‘ঠিক কতজন আত্মগোপনে আছেন, এ তথ্য আমাদের কাছে নেই। বিভিন্ন সময়ে মামলায় যাঁরা আসামি হয়েছেন, তাঁরা পালিয়ে না থেকে আদালতে গিয়ে সমাধান করলে ভালো হবে। তাঁরা যেহেতু অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন, তো তাঁরা পালিয়ে থাকবেন কেন? তাঁদের উচিত পালিয়ে না থেকে আদালতে গিয়ে আইনিভাবে মোকাবিলা করা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত