Ajker Patrika

জিআই সনদ পাচ্ছে বাগদা

খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ৪৭
জিআই সনদ পাচ্ছে বাগদা

অবশেষে রপ্তানি বাণিজ্যে ‘ব্ল্যাক টাইগার’ খ্যাত বাগদা চিংড়ির জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেটর বা জিআই সনদ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সনদ পাওয়ার আবেদনের ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশ আপত্তি না করায় এ সনদ এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায়।

জিআই সনদ পেলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিংয়ে বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি বৈদেশিক ক্রেতার কাছে গ্রহণযোগ্যতা যেমন বাড়বে, তেমনি পণ্যমূল্যও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

চিংড়িচাষি ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশির দশক থেকে দেশে বাণিজ্যিকভাবে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন ও রপ্তানি হয়ে আসছে, কিন্তু জিআই সনদ না থাকায় এই পণ্যের ওপর বাংলাদেশের একক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি।

আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং না থাকায় রপ্তানিকারকেরা কাঙ্ক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ দখল করছে বিদেশের বাজার।

এ অবস্থায় বিশ্ববাজারে বাগদা চিংড়িকে বাংলাদেশের বিশেষায়িত পণ্য হিসেবে তুলে ধরতে জিআই সনদের জন্য ২০১৭ সালে মৎস্য অধিদপ্তর আবেদন করে। সরকারের পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস বিভাগ গেজেট ও আন্তর্জাতিক জার্নালে চলতি বছরের ৬ অক্টোবর বিষয়টি প্রকাশ করে।

নিয়ম অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের পর এ ক্ষেত্রে কেউ আপত্তি না করলে প্রথম আবেদনকারীর জিআই সনদ মিলবে। যেহেতু ৬ ডিসেম্বর আপত্তি প্রদানের শেষ সময় ছিল। তবে এই সময়ের মধ্যে কেউ আবেদন বা আপত্তি জানায়নি। তাই এর একক দাবিদার বাংলাদেশ। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা।

এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন জিআই সনদের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে থাকে। এখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে দ্রুত আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য।

সনদের পর এই সেক্টর যেমন ঘুরে দাঁড়াবে, তেমনি ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

অপরদিকে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) এস হুমায়ুন কবির বাগদা চিংড়ির জিআই সনদপ্রাপ্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মৎস্য দপ্তর, পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

এস হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জিআই সনদ না থাকায় আমরা এতদিন বাগদার ব্র্যান্ডিং করতে পারিনি। অন্য দেশ সুবিধা নিয়েছে। এখন এই সেক্টরে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সেক্টরের অনেক প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। তাঁদের সক্রিয় করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নিতে হবে। যেহেতু বাগদা বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং, তাই আমাদের পণ্য হতে হবে সর্বোচ্চ মানসম্মত ও প্রথম শ্রেণির। এখানে দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণির চিংড়ি রপ্তানির সুযোগ নেই।’

রোজেলা সি ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজারে চাহিদার তুলনায় আমাদের বাগদার সরবরাহ খুবই কম। লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১০৫টি হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাত ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ২৮টি টিকে আছে। এসব প্রতিষ্ঠান উৎপাদনক্ষমতার মাত্র ১০-১৫ শতাংশ ব্যবহার করে। এসব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত মানসম্মত কাঁচামাল নিশ্চিতের জন্য বিকল্প ‘ভেনামি’ প্রজাতির চিংড়ি চাষের বিকল্প নেই। সরকার ভেনামির অনুমোদন দিলে এ সেক্টর যেমন ঘুরে দাঁড়াবে, তেমনি ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত