বাসন্তি সাহা
অটিজম একধরনের ব্রেড ডিসঅর্ডার, যার ফলে বাচ্চাদের কথা বলা, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, বন্ধু তৈরি, পড়াশোনা এমনকি নিজের কাজ নিজে করতে পারা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। যা শুধু এই শিশুই নয়, এদের মা-বাবাসহ পুরো পরিবারকে প্রভাবিত করে।
তবে কিছু বাচ্চা আছে, যাদের পড়াশোনায় সমস্যা নেই, কিন্তু একই কথা বারবার বলতে থাকে। এরা ক্লাসে বসতে চায় না। আবার অনেক বাচ্চার এই মানসিক সমস্যার সঙ্গে খিঁচুনি, কানে না শোনা, চোখে কম দেখাসহ নানা রকম শারীরিক সমস্যাও থাকে।
এসব বাচ্চার বেড়ে ওঠা ও সামাজিক পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে মা-বাবাকে প্রচুর বেগ পেতে হয়। যেমন বাবির কথা উঠলেই প্রায় সবাই আমাকে বলে, ওকে নিয়ে বেশি বেশি বেড়াতে যাবেন। কিন্তু কোথায় যাব? সামাজিক পরিবেশ, সেই পরিবেশের মানুষগুলো কি ওকে বুঝতে পারবে? ওকে সহ্য করে নেওয়ার মতো সংবেদনশীল মন কি সবার আছে!
আমার ছেলে বাবির বয়স ১৪ বছর। সে প্রতিবন্ধী। বাবির বয়স যখন ৪-৫, তখন চাইল্ড নিউরোলজিস্ট বলেছিলেন, বেড়াতে যাবেন ওকে নিয়ে, মানুষের সঙ্গে মিশতে দেবেন। প্রথম প্রথম বেড়াতে গিয়ে দেখেছি, বাবি একমুহূর্তের জন্য কোথাও বসতে দিত না। যাদের বাড়িতে যেতাম, তারাও অস্থির হয়ে যেত ওর অতিরিক্ত চঞ্চলতায়। কয়েকবার কয়েকটা জন্মদিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর একদিন মনে হলো, আমার কোনো অধিকার নেই ওই ছোট বাচ্চাটার জন্মদিনটাকে পণ্ড করার বা ওর মা-বাবাকে বিব্রত করার। আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিয়েছি। আর কোথাও নিয়ে গেলে ওর ওয়াশরুম, খাবার নিয়ে এত সমস্যা হতো যে একসময় মনে হলো, তাকে নিয়ে আর কোথাও বের হব না। তাই বেড়াতে যাওয়ার প্রসঙ্গে কেউ কিছু বললে চুপ করে থাকি। কী হবে এসব সাতকাহন শুনিয়ে। তবে কিছু কিছু মা-বাবা তাঁদের অসীম ধৈর্য নিয়ে এ ধরনের বাচ্চাকে বেড়ানোতে অভ্যস্ত করেছেন।
এসব বাচ্চাকে স্বাবলম্বী করার জন্য নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু প্যারেন্টিং গাইডলাইন শেয়ার করলাম।
১. বাচ্চার অটিজম আছে, এটা জানার সঙ্গে সঙ্গে দিশেহারা না হয়ে নিজেকে প্রস্তুত করা জরুরি। আজ এই ডাক্তার-কাল ওই ডাক্তার না করে নিজের ওপর আস্থা রাখা এবং শিশুকে নিজের কাজ নিজেকে করাতে শেখানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ অন্য মা-বাবা, কাউন্সেলর বা নিজের অবজারভেশনের ওপর নির্ভর করতে পারেন। যেমন তাকে তার প্যান্ট আজ হাতে তুলে দিলেন, এমন সাত দিন করার পর, প্যান্টটা আর হাতে তুলে না দিয়ে পাশে রেখে ওকে তুলতে বলতে পারেন। একেবারে ছোট ছোট নির্দেশনা দিয়ে কাজটি করতে শেখান।
২. সর্দি-ঠান্ডায় সে কেমন করছে, সেটা লক্ষ করুন, যেগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন সে অসুস্থ। যেমন ও খেতে চাইছে না, তখন বুঝতে হবে ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে। তখন ওর পছন্দের খাবারগুলো দিয়ে চেষ্টা করতে পারেন অথবা ওর পছন্দের খাবারগুলো টেবিলে সাজিয়ে রাখতে পারেন, যাতে সে নিজেই তুলে নিতে পারে।
৩. পরিবারের কোনো সদস্য যদি ওর প্রতি সংবেদনশীল হয়, তবে তাকে আপনাদের এই যুদ্ধে তাকেও সঙ্গে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তার একটা অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করে নিতে পারেন যে আমরা যখন তাকে জল খেতে বলব, তখন গ্লাসটা তার হাতের কাছে রাখব। সবাই একই রকমভাবে তাকে বলতে পারলে, করতে পারলে, শিশুর পক্ষে বোঝা সহজ হয়।
৪. অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলার সময় পাশে থাকুন বা শিক্ষককে নজর রাখতে অনুরোধ করুন, যাতে অন্য শিশুরা তাকে আঘাত করতে না পারে। এ ধরনের শিশুর প্রতি সহপাঠীরা সব সময় সদয় হয় না। যেমন একটি শিশু শব্দ ভয় পায়, এটা বোঝার পর সহপাঠীরা তার কানের কাছে নানা রকম শব্দ করে এতই বিরক্ত করেছে যে,
সে আর স্কুলে যেতে চায় না।
৫. কখনো সে কথা বলতে পারে না বলে সহপাঠীরা তাকে মারধর করে। সে অন্য রকমভাবে কাঁদে বা শব্দ করে, তাই তারা এসব দেখে আনন্দ পায়। এ ক্ষেত্রে স্কুলে সহপাঠীদের কয়েকজনের মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। বাসায় নিয়ে যান। নিজেদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হলে, সেটা বাচ্চাদের ওপরও প্রভাব ফেলবে। তখনই এই বন্ধুরা বা সহপাঠীরা আপনার স্পেশাল বাচ্চার সেফগার্ড হয়ে কাজ করবে।
৬. আপনার স্পেশাল বাচ্চাকে সুবর্ণ নাগরিক হিসেবে নিবন্ধিত করুন। স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ে এই সুবর্ণ নাগরিক নিবন্ধন করার ব্যবস্থা রয়েছে। এই সুবর্ণ নাগরিক কার্ড বা প্রতিবন্ধী কার্ড এই সব বিশেষ শিশুর ফ্রি চিকিৎসাসহ, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি, বিমান ভ্রমণ, চাকরি পাওয়াসহ সরকারি নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
লেখক: লেখক ও অধিকারকর্মী
অটিজম একধরনের ব্রেড ডিসঅর্ডার, যার ফলে বাচ্চাদের কথা বলা, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, বন্ধু তৈরি, পড়াশোনা এমনকি নিজের কাজ নিজে করতে পারা অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। যা শুধু এই শিশুই নয়, এদের মা-বাবাসহ পুরো পরিবারকে প্রভাবিত করে।
তবে কিছু বাচ্চা আছে, যাদের পড়াশোনায় সমস্যা নেই, কিন্তু একই কথা বারবার বলতে থাকে। এরা ক্লাসে বসতে চায় না। আবার অনেক বাচ্চার এই মানসিক সমস্যার সঙ্গে খিঁচুনি, কানে না শোনা, চোখে কম দেখাসহ নানা রকম শারীরিক সমস্যাও থাকে।
এসব বাচ্চার বেড়ে ওঠা ও সামাজিক পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে মা-বাবাকে প্রচুর বেগ পেতে হয়। যেমন বাবির কথা উঠলেই প্রায় সবাই আমাকে বলে, ওকে নিয়ে বেশি বেশি বেড়াতে যাবেন। কিন্তু কোথায় যাব? সামাজিক পরিবেশ, সেই পরিবেশের মানুষগুলো কি ওকে বুঝতে পারবে? ওকে সহ্য করে নেওয়ার মতো সংবেদনশীল মন কি সবার আছে!
আমার ছেলে বাবির বয়স ১৪ বছর। সে প্রতিবন্ধী। বাবির বয়স যখন ৪-৫, তখন চাইল্ড নিউরোলজিস্ট বলেছিলেন, বেড়াতে যাবেন ওকে নিয়ে, মানুষের সঙ্গে মিশতে দেবেন। প্রথম প্রথম বেড়াতে গিয়ে দেখেছি, বাবি একমুহূর্তের জন্য কোথাও বসতে দিত না। যাদের বাড়িতে যেতাম, তারাও অস্থির হয়ে যেত ওর অতিরিক্ত চঞ্চলতায়। কয়েকবার কয়েকটা জন্মদিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর একদিন মনে হলো, আমার কোনো অধিকার নেই ওই ছোট বাচ্চাটার জন্মদিনটাকে পণ্ড করার বা ওর মা-বাবাকে বিব্রত করার। আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিয়েছি। আর কোথাও নিয়ে গেলে ওর ওয়াশরুম, খাবার নিয়ে এত সমস্যা হতো যে একসময় মনে হলো, তাকে নিয়ে আর কোথাও বের হব না। তাই বেড়াতে যাওয়ার প্রসঙ্গে কেউ কিছু বললে চুপ করে থাকি। কী হবে এসব সাতকাহন শুনিয়ে। তবে কিছু কিছু মা-বাবা তাঁদের অসীম ধৈর্য নিয়ে এ ধরনের বাচ্চাকে বেড়ানোতে অভ্যস্ত করেছেন।
এসব বাচ্চাকে স্বাবলম্বী করার জন্য নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু প্যারেন্টিং গাইডলাইন শেয়ার করলাম।
১. বাচ্চার অটিজম আছে, এটা জানার সঙ্গে সঙ্গে দিশেহারা না হয়ে নিজেকে প্রস্তুত করা জরুরি। আজ এই ডাক্তার-কাল ওই ডাক্তার না করে নিজের ওপর আস্থা রাখা এবং শিশুকে নিজের কাজ নিজেকে করাতে শেখানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ অন্য মা-বাবা, কাউন্সেলর বা নিজের অবজারভেশনের ওপর নির্ভর করতে পারেন। যেমন তাকে তার প্যান্ট আজ হাতে তুলে দিলেন, এমন সাত দিন করার পর, প্যান্টটা আর হাতে তুলে না দিয়ে পাশে রেখে ওকে তুলতে বলতে পারেন। একেবারে ছোট ছোট নির্দেশনা দিয়ে কাজটি করতে শেখান।
২. সর্দি-ঠান্ডায় সে কেমন করছে, সেটা লক্ষ করুন, যেগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন সে অসুস্থ। যেমন ও খেতে চাইছে না, তখন বুঝতে হবে ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে। তখন ওর পছন্দের খাবারগুলো দিয়ে চেষ্টা করতে পারেন অথবা ওর পছন্দের খাবারগুলো টেবিলে সাজিয়ে রাখতে পারেন, যাতে সে নিজেই তুলে নিতে পারে।
৩. পরিবারের কোনো সদস্য যদি ওর প্রতি সংবেদনশীল হয়, তবে তাকে আপনাদের এই যুদ্ধে তাকেও সঙ্গে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তার একটা অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করে নিতে পারেন যে আমরা যখন তাকে জল খেতে বলব, তখন গ্লাসটা তার হাতের কাছে রাখব। সবাই একই রকমভাবে তাকে বলতে পারলে, করতে পারলে, শিশুর পক্ষে বোঝা সহজ হয়।
৪. অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলার সময় পাশে থাকুন বা শিক্ষককে নজর রাখতে অনুরোধ করুন, যাতে অন্য শিশুরা তাকে আঘাত করতে না পারে। এ ধরনের শিশুর প্রতি সহপাঠীরা সব সময় সদয় হয় না। যেমন একটি শিশু শব্দ ভয় পায়, এটা বোঝার পর সহপাঠীরা তার কানের কাছে নানা রকম শব্দ করে এতই বিরক্ত করেছে যে,
সে আর স্কুলে যেতে চায় না।
৫. কখনো সে কথা বলতে পারে না বলে সহপাঠীরা তাকে মারধর করে। সে অন্য রকমভাবে কাঁদে বা শব্দ করে, তাই তারা এসব দেখে আনন্দ পায়। এ ক্ষেত্রে স্কুলে সহপাঠীদের কয়েকজনের মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন। বাসায় নিয়ে যান। নিজেদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হলে, সেটা বাচ্চাদের ওপরও প্রভাব ফেলবে। তখনই এই বন্ধুরা বা সহপাঠীরা আপনার স্পেশাল বাচ্চার সেফগার্ড হয়ে কাজ করবে।
৬. আপনার স্পেশাল বাচ্চাকে সুবর্ণ নাগরিক হিসেবে নিবন্ধিত করুন। স্থানীয় সমাজসেবা কার্যালয়ে এই সুবর্ণ নাগরিক নিবন্ধন করার ব্যবস্থা রয়েছে। এই সুবর্ণ নাগরিক কার্ড বা প্রতিবন্ধী কার্ড এই সব বিশেষ শিশুর ফ্রি চিকিৎসাসহ, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি, বিমান ভ্রমণ, চাকরি পাওয়াসহ সরকারি নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।
লেখক: লেখক ও অধিকারকর্মী
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫