Ajker Patrika

মা

শামসুর রাহমান
আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ১০: ৪৪
মা

পরিণত বয়সেই শামসুর রাহমানের মা মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল তিরাশি বছর। সে সময় শামসুর রাহমানের বয়স আটষট্টি। যে বয়সেই মা মারা যান না কেন, তা সন্তানের মন বেদনার্ত করে তোলে। মায়ের মৃত্যু সহজভাবে নিতে পারে না কেউ।

শামসুর রাহমান মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন অনেক কিছু। আর্থিক সম্পদ নয়, তিনি পেয়েছেন মানসিক সম্পদ। মাকেই তিনি মনে করতেন জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। শিক্ষক হতে হলে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে সব সময় মেনে নিতে হবে, এমন তো নয়। ক্লাস ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু জীবনের পাঠই তাঁকে ঋদ্ধ করেছে। নিয়ম করে বই পড়তেন, খুঁটিয়ে পড়তেন সংবাদপত্র। খবরের কাগজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি লাইন পড়তেন। শামসুর রাহমানের আবার সংবাদপত্রের প্রতি অতটা আগ্রহ ছিল না। মা মাঝে মাঝে বলতেন, ‘ওই সংবাদটা পড়েছ নাকি?’

‘না।’

নিজে না পড়েও মায়ের আগ্রহে খুশি হতেন কবি।

বই পড়তেন খুব। কবি যখন একেবারে ছোট, তখনকার দুটো বইয়ের কথা মনে আছে তাঁর। পাঠ্যবইয়ের বাইরে ‘বিষাদ-সিন্ধু’ বইটি ছিল। সেটা থেকে কিছু না বুঝেই নানিকে পড়ে শুনিয়েছেন শামসুর রাহমান। ছোট ছিলেন বলে শামসুর রাহমান তাঁর অনেক কিছুই বুঝতে পারতেন না, নানিও বুঝতে পারতেন না। তাতে কী? মিলিত পড়াশোনা চলত। এটাকে অনেকটা ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা দেওয়া হতো। মা তো পড়তেনই।

আরেকটি বই মা পড়তেন লুকিয়ে। বইটির নাম ছিল ‘আনোয়ারা’। সে বই ছোঁয়ারও অনুমতি ছিল না শামসুরের। একদিন মা বইটি পড়ে বালিশের নিচে রেখেছিলেন। শামসুর রাহমান লুকিয়ে প্রচ্ছদটা দেখে নিয়েছিলেন। সে বইটির লেখক কে, সেটা গল্প না উপন্যাস, সেটাও জানার সৌভাগ্য হয়নি সে বয়সে।

এ ছাড়া আরও অনেক বই পড়তেন মা।

এ বইটি লিখেছিলেন মোহাম্মদ নজিবুর রহমান। এটাই ছিল তাঁর প্রথম ও সবচেয়ে সার্থক উপন্যাস।

সূত্র: আবুবকর সিদ্দিক, শামসুর রাহমান স্মারকগ্রন্থ, পৃষ্ঠা ২৮৪-২৮৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত