মহাসড়কে পাথরের ব্যবসা

চৌদ্দগ্রামের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ এবং ফুটপাত দখল করে চলছে বালু ও পাথরের ব্যবসা। এ অভিযোগ পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী বাবুলসহ একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। মহাসড়কে পাথর ও বালু রাখায় চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। ঘটছে দুর্ঘটনা।

মহাসড়ক অবৈধ দখলমুক্ত করতে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন হাইওয়ে পুলিশের মিয়াবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তিনি উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চৌদ্দগ্রাম সরকারি কলেজের সামনে পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী বাবুল এই ব্যবসা করছেন। এ কাজে তাঁর একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পাথর ও বালু রাখছেন। সেখান থেকে চলছে বেচাকেনা। এতে সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটতে পারছেন না পথচারীরা। বাধ্য হয়ে মূল সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা। দেড় বছর আগে এমনিভাবে এক শিক্ষার্থী গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন।

অপরদিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যাত্রীদের সুবিধার্থে একটি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হয়। সেই যাত্রীছাউনির সামনে ও পাশে পাথর-বালু রাখা হয়েছে। ফলে এটি ব্যবহার করতে পারছেন না পথচারীরা।

চৌদ্দগ্রাম নজমিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কাশেম মো. শামছুদ্দিন বলেন, ‘মহাসড়কের পাশ দিয়ে পথচারীদের চলাচল করতে হয়। কিন্তু সেসব স্থানে বালু রাখার কারণে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’

অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘এভাবে সড়কের ওপর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে আমার মাদ্রাসার মেহেদী হাসান নামের নবম শ্রেণির এক ছাত্র গাড়িচাপায় নিহত হয়েছে। সে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার পূর্ব চান্দিশকরা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তাই মহাসড়কের দুই পাশ অবৈধ দখলমুক্ত করে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করি।’

নিহত মাদ্রাসা ছাত্র মেহেদী হাসানের বাবা আবুল কালাম বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে অবৈধভাবে বালুসহ নির্মাণসামগ্রী রাখার কারণে সাধারণ মানুষ হাঁটাচলা করতে পারে না। আমার ছেলে মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছে। আর কারও ছেলেমেয়ে যাতে এভাবে মারা না যায়, সেজন্য প্রশাসনের উচিত মহাসড়ক অবৈধ দখলমুক্ত করা।’

সরেজমিনে মোটরসাইকেলচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘মহাসড়কে পাথর ও বালু রাখার কারণে বাইক চলাচলে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। যখন গাড়ি ওভারটেক করে তখন বাধ্য হয়ে আমাদের পাথর ও বালুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে হয়। এতে মোটরসাইকেল চালকদের বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।’

পথচারী আহমেদ হোসেন বলেন, ‘পাথর ও বালুর কারণে আমাদের মহাসড়কের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ভয়ে ভয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।’

অভিযুক্ত কাউন্সিলর কাজী বাবুল মহাসড়ক দখল করে ব্যবসার অভিযোগ অস্বীকার করেন। অথচ সেখানে সাঁটানো সাইনবোর্ডে যোগাযোগের জন্য তাঁর মোবাইল ফোন নম্বর লেখা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে ইট-বালু-পাথর রাখা হয়েছে। মন চাইলে আপনিও (প্রতিবেদক) নিয়ে যেতে পারেন। যে বাধা দেবে, মনে করবেন সামগ্রীগুলো তাঁরই।’

হাইওয়ে পুলিশ মিয়াবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মহাসড়ক দখল করে নির্মাণসামগ্রীসহ ইট-বালুর ব্যবসা অবৈধ। এতে যান চলাচল ও পথচারী চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করে আসছি। তাই এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘শিগগির এসব অবৈধ নির্মাণসামগ্রী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।’