Ajker Patrika

ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বড় প্রতিবাদ

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ জুন ২০২২, ১৫: ৫১
ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বড় প্রতিবাদ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে ঘর তৈরির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে নাসিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্যরা বলছেন, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র সম্প্রতি বিদ্যালয়ের এই মাঠটি নিজেদের দাবি করে বিক্রি করে দেয়। অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে, খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাসিরপুর গ্রামের পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্যের মালিকানাধীন প্রায় তিন একর জায়গা গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করছিলেন স্থানীয়রা। তিন দশক আগে নাসিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর থেকেই জায়গাটিকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছে শিক্ষার্থীরা। পূর্ণচন্দ্রের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে প্রমোদ চন্দ্র ভট্টাচার্য, একই গ্রামের রঞ্জিত রায় চৌধুরী, প্রেমাংশু কুমার ও তপন রায় চৌধুরী বিএস খতিয়ানে এই জমি নিজেদের নামে নথিভুক্ত করে নেন।

পরে প্রেমাংশু ও রঞ্জিত জায়গাটির ২৪ শতক জায়গা নাসিরনগর সরকারি কলেজের কর্মচারী সৈয়দ নজরুল ইসলামের কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু জায়গা কেনার পরও এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে দখল নিতে পারেননি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ২০২০ সালে নাসিরনগর উপজেলা সদরে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধনও করেন স্থানীয়রা। পরে এ নিয়ে নাসিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অরুণ জ্যোতি ভট্টাচার্য ও মাঠ রক্ষা আন্দোলনের কর্মী আক্তার মিয়াসহ ১৫ জনের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে দুটি মামলা হয়।

সম্প্রতি প্রেমাংশু কুমার ও রঞ্জিত রায় চৌধুরীর একই গ্রামের ঝরনা আক্তার ও নুরুন্নাহারের কাছে ১৪ শতক জায়গা বিক্রি করেন। এরপর ৬ জুন থেকে তাঁরা এই মাঠে ঘর নির্মাণ শুরু করেন।

এ বিষয়ে জানতে প্রেমাংশু কুমার ও রঞ্জিত রায় চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু ফোন না ধরায় তাঁদের কোনো মন্তব্য জানা যায়নি।

নাসিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়য়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী কৃপা দেবনাথ ঋতু বলে, ‘আমাদের খেলার মাঠটি দখল করে ফেলেছে ঘর তৈরি হচ্ছে। আমরা মাঠটি ফিরে পেতে চাই।’

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিক্তা রানী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি বিদ্যালয়ের মাঠ হিসেবে পরিচিত। প্রায় তিন যুগ ধরে আমরা বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ক্রীড়া অনুষ্ঠান ওই মাঠেই করছি।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অরুণ জ্যোতি ভট্টাচার্য বলেন, ‘এটি নাসিরপুর গ্রামের যুবসমাজ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার একমাত্র খেলার মাঠ। মাঠের দখলের প্রতিবাদ করায় আমার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে মামলা করেন “মাঠ দখলকারী”রা। আমি চাই মাঠটি দখল মুক্ত হোক।’

খেলার মাঠে ঘর নির্মাণকারী ঝরনা ও নুরুন্নাহারের বাড়িতে গেলে জানা যায় তাঁরা বাড়িতে নেই। পরে কথা হয় তাঁদের ভাই কুরবান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বোনেরা প্রেমাংশু দত্ত ও রঞ্জিত ঠাকুরের কাছ থেকে ১৪ শতক জায়গা কিনছেন। আমরা কেনা জায়গায় ঘর তুলছি। কারও জায়গা দখল করছি না।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের জন্য খেলার মাঠ খুবই প্রয়োজন। তবে এই মাঠ দখলের বিষয়ে আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোনাব্বর হোসেন বলেন, ‘আমি নাসিরনগরে নতুন এসেছি। মাঠ নিয়ে কোনো সমস্যার কথা এখনো আমি জানি না। বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত