Ajker Patrika

বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারের বাড়তি বিলে ক্ষুব্ধ গ্রাহক

আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৪, ০৯: ২৩
বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারের বাড়তি বিলে ক্ষুব্ধ গ্রাহক

বিদ্যুৎ বিতরণে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর অংশ হিসেবে গ্রামাঞ্চলেও শুরু হয়েছে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ। ভোগান্তি কমানোর কথা বলে চালু করা এই প্রি-পেইড মিটার এখন সাধারণ গ্রাহকের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রি-পেইড মিটার নেওয়ার পর কেটে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। জরুরি ব্যালান্স নিলে গুনতে হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত সুদ। সবচেয়ে বড় ভোগান্তির নাম রিচার্জ করতে ২২০ থেকে ২৪০টি ডিজিট (সংখ্যা) মিটারে প্রবেশ করানো। একসঙ্গে এত ডিজিট প্রবেশ করাতে গিয়ে ভুল হলেই লকড হয়ে যায় মিটার। তখন দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয় গ্রাহককে।

দেশে বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (আরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সব মিলিয়ে ৪ কোটি ৭১ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫২ লাখ গ্রাহক প্রি-পেইডের মিটারের আওতায় এসেছেন। বাকিদের ক্রমান্বয়ে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কাজ চলছে। কিন্তু ইতিমধ্যে প্রি-পেইডের আওতায় আসা গ্রাহকেরা মিটার নিয়ে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিষয়টি রাজপথের আন্দোলন ও আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। তারপরও ভোগান্তি কমাতে ছয়টি বিতরণ সংস্থাকে কড়া অনুশাসনের আওতায় আনেনি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, গ্রাহককে ৩০ টাকা ডিমান্ড চার্জ, মোট বিলের ৫ শতাংশ বিলম্ব মাশুল (বিলম্বে বিল পরিশোধে) এবং ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিতে হয়। বিইআরসির অনুমোদন ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর কোনো ধরনের চার্জ বা অর্থ আরোপ করার ক্ষমতা নেই বিতরণ কোম্পানির। অথচ দেশের ছয় বিতরণ কোম্পানি এমন সব খাতে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছে, যাতে বিইআরসির অনুমতি নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যদি নিয়মের বাইরে কোনো বিতরণ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করে, সেটা আমরা দেখব। এই সরকার যে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে, তা সাধারণ মানুষের জীবনকে সহজ ও গতিশীল করার জন্য।

এই উন্নয়ন জনগণের জন্য, জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা নিশ্চয়ই আমরা দেখব।’

ডেসকোর নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) প্রকৌশলী এ কে এম মহিউদ্দিন টেলিফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা নিয়মের বাইরে কোনো অর্থ নিই না। আমরা নিয়মের মধ্যেই প্রি-পেইড মিটারের বিদ্যুতের বিলসহ অন্যান্য অর্থ নিয়ে থাকি।’

এক প্রশ্নের জবাবে এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, আগের মিটারগুলো পুরোনো প্রযুক্তির ছিল। সে কারণে লম্বা ডিজিট দিতে হতো। এখন স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার দেওয়া হচ্ছে। এতে অনলাইনে টাকা রিচার্জ করা যায়।

২৫০ কোটি অবৈধ মিটার ভাড়া
বিইআরসি ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব গ্রাহক পোস্ট পেইড মিটার ব্যবহার করতেন, তাঁরা মিটার ভাড়া দিতেন। কিন্তু যাঁরা প্রি-পেইড মিটার নিজের টাকায় কিনেছেন, তাঁদের মিটার ভাড়া দিতে হবে না। বরং এসব গ্রাহক উল্টো মোট বিলের ওপর ১ শতাংশ রিবেট বা প্রণোদনা হিসেবে ফেরত পাবেন। অভিযোগ আছে, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো গ্রাহককে ১ শতাংশ অর্থ ফেরত দিচ্ছে না, বরং প্রতি মাসে মিটার ভাড়া হিসেবে ৪০ টাকা নিচ্ছে। দেশে ৫২ লাখ প্রি-পেইড মিটার রয়েছে। প্রতি মাসে একেকজন গ্রাহকের কাছ থেকে ৪০ টাকা মিটার ভাড়া নিলে মাসে প্রায় ২১ কোটি টাকা এবং বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা মিটার ভাড়া বাবদ আয় করে কোম্পানিগুলো। 

২০০ টাকায় সুদ ৫০ টাকা
কোনো প্রি-পেইড মিটারে টাকা ফুরিয়ে গেলে জরুরি ব্যালান্স হিসেবে ২০০ টাকা নেওয়া যায়। পরদিন এই ২০০ টাকা ফেরত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহককে ৫০ টাকা সুদ হিসেবে দিতে হবে। অথচ বিইআরসি ও বিদ্যুৎ বিভাগের পরিষ্কার নির্দেশনা রয়েছে, জরুরি ব্যালান্সে কোনোভাবেই সুদ নেওয়া যাবে না। 

বিল দিতে কমিশন ও লক খুলতেও টাকা
নিয়ম অনুযায়ী, কারিগরি ত্রুটির কারণে যদি মিটার আনলক অর্থাৎ মিটারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে মিটারের লক খুলতে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো অর্থ নিতে পারবে না। অথচ দেশের ছয়টি বিতরণ সংস্থা মিটার আনলকের সব দায়িত্ব গ্রাহকের কাঁধে চাপিয়ে দেয়। ১ হাজার ৬০০ টাকা স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে জমা দিয়ে তারপর মিটার আনলক করতে হয়। 

টাকা বেশি কাটার অভিযোগ
অন্তত ২০ জন পোস্ট পেইড ও প্রি-পেইড গ্রাহক মে মাসে বাড়তি বিল এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের দাবি, গ্রীষ্মের এপ্রিল মাসে বিল যা এসেছে, মে মাসে তার থেকে কোনো কোনো গ্রাহকের দ্বিগুণ এসেছে। এটা অস্বাভাবিক। রাজধানীর কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজারের একজন ভবনমালিক জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ির নিচতলায় তিনটি দোকান রয়েছে। এসব দোকানের গড়ে বাণিজ্যিক বিল গত মে মাসে এসেছে ২৭ হাজার টাকা। এপ্রিল মাসে সেই বিল এসেছে ৪৮ হাজার টাকা। 
একই রকম অভিযোগ করেছেন মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের এক ব্যবসায়ী। তাঁর দাবি, এপ্রিল মাসে বিল এসেছিল ১৪ হাজার টাকা, আর মে মাসে বিল এসেছে ২৬ হাজার টাকা। উভয় গ্রাহক ডিপিডিসির। 

বিদ্যুতের ভোগান্তি নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কোনো পর্যায় সেবার দৃষ্টি নিয়ে কোম্পানিগুলো গ্রাহককে দেখে না। তারা গ্রাহককে টাকা কামানোর যন্ত্র হিসেবে দেখে। সে কারণে অনুমোদনের বাইরেও এসব অর্থ নিচ্ছে। এগুলো বেআইনি অর্থ উত্তোলন, দ্রুত বন্ধ করতে হবে এ ধরনের অর্থ নেওয়া। কোনো ধরনের আইনি এখতিয়ার নেই এসব অর্থ উত্তোলনের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত