Ajker Patrika

পানির নিচে ৩২ হেক্টর জমি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
পানির নিচে ৩২ হেক্টর জমি

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় প্রভাবশালীদের ফিশারিজের বাঁধে ছয় মাস ধরে পানিতে তলিয়ে রয়েছে ৩২ হেক্টর কৃষিজমি। আমন রোপণের সময় পেরিয়ে গেলেও জলাবদ্ধতার কারণে আবাদ করতে  পারছেন না শতাধিক কৃষক। এদিকে অচিরেই বিষয়টি সমাধানের কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের নন্দীগ্রামে প্রায় ৩২ হেক্টর ফসলের মাঠ পানির নিচে রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী অধিক মুনাফার আশায় অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিয়ে পুকুর নির্মাণ করায় আব্বাহরী মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ৬ মাস ধরে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে মানুষের ভোগান্তির অন্ত নেই। কিছু বাড়িঘরে পানি ওঠায় তাদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

কৃষকেরা জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী আবুল হাসেম, দস্তর আলী, জনাব আলী, আব্দুল খালেক, ভুট্টো মিয়াসহ বেশ কয়েকজন ফসলের মাঠ থেকে বিলে পানি নামার জায়গায় ভেকু দিয়ে ফিশারিজ ও পুকুরের বাঁধ তৈরি করেন। ফলে আব্বাহরী ফসলের মাঠের পানি নামছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন শতাধিক কৃষক।

ভুক্তভোগী কৃষক মজিবুর রহমান জানান, জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ৪৯ জন কৃষক ৪ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েও সমাধান পাননি।

আরেক কৃষক আরিফ সরকার বলেন, ‘প্রায় ৮০০ কাঠা জমি পানিতে তলিয়ে আছে। আমন চাষের সময় শেষ হয়ে এলেও বাঁধের কারণে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে এ বছর চলাই মুশকিল হবে।’

কৃষক জুয়েল মিয়া বলেন, ‘দোয়ের বিলে অপরিকল্পিত পুকুরের কারণে আমিসহ ১০-১৫টি পরিবার পানিবন্দী। ঘর, উঠান, রান্নাঘর, টয়লেট—সব জায়গাতেই পানি। পানির জন্য গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়েও বিপদে আছি।’

অভিযুক্ত ফিশারিজের মালিক জনাব আলী বলেন, ‘ফিশারিজের কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সঠিক নয়। আমাদের মতো অনেক চাষি আছেন, তাঁরা পানি নামার রাস্তা দিলে আমরাও দেব। আমাদের কারণে কৃষকেরা সমস্যায় পড়ুক, এটা চাই না।’

ডৌহাখলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এম এ কাইয়ুম বলেন, ‘গত বছরও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় সমন্বয়ের মাধ্যমে ফিশারিজ 
ও পুকুরের বাঁধ কেটে দিলে কৃষকেরা বোরো আমন করতে পেরেছিলেন।

এ বছরও সে সমস্যা হয়েছে। ইউএনওর তত্ত্বাবধানে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।’

ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মতিউজ্জামান বলেন, ‘কৃষিজমিতে পুকুর তৈরি করে অন্যের সমস্যা সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি শুনেছি, সমাধানেরও চেষ্টা চলছে।’

ইউএনও হাসান মারুফ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি এখন জটিল আকার ধারণ করেছে। গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রতিনিধিসহ স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে সমঝোতার বৈঠক হয়েছে। জলাবদ্ধতার মধ্যে যারা আছে, তাদের জলাবদ্ধতা নিরসনে পুকুরের বাঁধ কাটলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে। এতে বড় বাধা নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা। সর্বসম্মতিক্রমে আশা করি ভালো সিদ্ধান্ত আসবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসনও কাজ করছে। আশা করি দ্রুত এর সমাধান আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত