Ajker Patrika

জনবসতিতে কয়লার চুল্লি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২২, ১২: ০২
জনবসতিতে কয়লার চুল্লি

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার একটি গ্রামে অবৈধভাবে চুল্লিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। চুল্লির পাশেই রয়েছে জনবসতি, ফসলি জমি ও দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানের চারটি চুল্লিতে একেকবার শতাধিক মণ কাঠ পোড়ানো হয়।

কাঠ পোড়ানোর বিষাক্ত ধোঁয়ায় আশপাশের বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষার্থীদের চোখ জ্বালাপোড়াসহ শ্বাসকষ্টে পড়তে হয়। শুধু তাই নয়, গ্রামের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করায় পরিবেশ ও ফসলি জমিরও ক্ষতি হচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের পাথরা গ্রামের আলাউদ্দিন নামের এক বাসিন্দা কাঠ দিয়ে কয়লা তৈরির জন্য চারটি চুলা স্থাপন করেন। এসব চুলার পাশেই রয়েছে একটি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিষাক্ত ধোঁয়া ও গন্ধের মধ্যে পড়ালেখা করতে হয়।

এ ছাড়া চুল্লির পাশের জমির ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঠ কিনে কয়লা তৈরির কারণে গাছ উজাড় হচ্ছে।

পাথরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশেই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কয়লা তৈরির কারখানায় দেদারসে পোড়ানো হলেও জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের বিধিনিষেধ থাকার পরও জনবসতি এলাকা ও ফসলি জমি নষ্ট করে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে।

চুল্লির পাশে অবস্থিত পাথরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হাসান ও বিল্লাল জানান, চুল্লির ধোঁয়ায় চোখ জ্বালাপোড়া করে, খুসখুসে কাশি হয়। সন্ধ্যায় কাঠ পোড়ানোর তীব্র গন্ধে পড়াশোনা করা যায় না।

স্থানীয় বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়লা তৈরির চুল্লির কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। সেই সঙ্গে জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে।

চুল্লিতে কর্মরত কয়লা শ্রমিকেরা জানান, চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি এবং ইট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেওয়া হয় চুল্লিতে। আগুন দেওয়া শেষ হলে সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়েক দিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়।

শ্রমিকেরা জানান, প্রতিটি চুল্লিতে একেক বার ১০০ থেকে ১৫০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ দিন। পরে কয়লা ঠান্ডা করে বস্তায় ভরে ট্রাক, পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। প্রতিবার চারটি চুলা থেকে তিন থেকে চার লাখ টাকার কয়লা বের হয়।

কয়লা ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, ‘কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি অবৈধ নয়। আমি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে চুল্লি স্থাপন করেছি। আমার লাইসেন্স আছে।’

মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, ‘কয়লা তৈরিতে কাঁচা কাঠ পোড়ানোয় কার্বন ও সিসা নির্গত হয়। যে এলাকায় এসব চুলায় কাঠ পুড়িয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করা হচ্ছে, সেখানে নিশ্চিতভাবে শিশু জন্মগতভাবেই ফুসফুসের সমস্যা নিয়েই জন্ম নেবে। এ ছাড়া এসব চুল্লির ধোঁয়ায় মানুষের অ্যাজমা, ফুসফুসের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, অ্যালার্জি এবং চোখের সমস্যাসহ নানাবিধ রোগ হতে পারে।’

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, ‘কাঠ পুড়িয়ে অবৈধভাবে কয়লা তৈরির খবর আমিও শুনেছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্রীরুপ মজুমদার বলেন, ‘মহেশপুরের যাদবপুর ইউনিয়নের পাথরা গ্রামে চুল্লি বসিয়ে কয়লা তৈরির বিষয়টি সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি। ইতিমধ্যে আমাদের হাতে এ সংক্রান্ত তথ্য ও কিছু ছবি এসেছে। এখন স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...