Ajker Patrika

হরিণ

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২২, ১৩: ০১
হরিণ

জয়নুল আবেদিন যখন আর্ট স্কুলের দায়িত্বে, তখন বার্ষিক বনভোজনে তিনি আর্ট স্কুলের লোকজনের বাইরে শিল্পী-সাহিত্যিকদেরও নিমন্ত্রণ করতেন। ময়মনসিংহের মধুপুরে যেবার যাওয়া হলো, সেবার সঙ্গে গিয়েছিলেন জসীমউদ্‌দীন। তিনি আবার সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন আবদুল আলীমকে। আবদুল আলীম তখন কবির কাছে গান শিখছেন।

কবি জসীমউদ্‌দীনই একসময় প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ‘কবিগান হোক।’

একদিকে জসীমউদ্‌দীন, অন্যদিকে রশীদ চৌধুরী। অন্যরা ধুয়া তোলে ‘মরি হায়রে হায়...’।

কবি ধরলেন, ‘মরি হায়রে হায়, এই ছিল কপালে/ পাঁচ শ টাকার বাগান খাইল পাঁচ টাকার ছাগলে...’!

কবি গাইতে গাইতে নাচতে থাকেন। জয়নুল আবেদিন এসে সবাইকে শিখিয়ে দেন ‘কবিকে সম্বোধন করবে “ও আমার সাধের পল্লী কবিরে!” বলে।’

জয়নুল আবেদিন খুব রসিক ছিলেন। ছাত্রদের প্রতি ছিল তাঁর অদ্ভুত ভালোবাসা। কিছু শেখাতে পারলে খুশি হতেন। একজন শিক্ষানবিশকে কী করে হাতে-কলমে শেখাতেন, তারই একটি গল্প বলা যাক। কম্পোজিশন ক্লাসে সবাই আঁকছে। সেদিনের বিষয় ছিল ‘গোয়ালঘর।’ গরু আর বাছুরসহ একটা ছবি দাঁড় করিয়েছেন কাইয়ুম চৌধুরী। এ সময় ক্লাসে ঢুকলেন জয়নুল আবেদিন। ঢুকেই চোখে পড়ল কাইয়ুম চৌধুরীর ছবিটি। মনোযোগ দিয়ে দেখলেন। তারপর কাইয়ুমকে সরিয়ে নিজে বসলেন টুলটিতে। চেয়ে নিলেন পেনসিল। বললেন, ‘বুঝলে হে, গরুর সাইজ ছোট হলেই বাছুর হয় না। বাছুরের ঠ্যাং হবে হরিণের মতো।’ বলতে বলতেই এঁকে ফেললেন। আর সত্যিই মনে হতে লাগল, বাছুরটা লাফাচ্ছে!

তারপর বুঝিয়ে বললেন, ‘আঁকার আগে ভালো করে বিষয়টা দেখবা। দেখাটা যদি রপ্ত করতে পারো, তাহলে আঁকাটা সহজ হবে।’

একটু আগ্রহ নিয়েই কাইয়ুম জিজ্ঞেস করেন, ‘স্যার, সাদা কাগজে ফসফস করে কী করে মন থেকে এঁকে ফেললেন?’

হেসে জবাব দিলেন শিল্পাচার্য, ‘সাদা ক্যানভাসে, সাদা কাগজে আমি দেখতে পাই।’ 

কাইয়ুম চৌধুরী, জীবনে আমার যত আনন্দ, পৃষ্ঠা ৪৫-৪৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত