Ajker Patrika

বিস্তীর্ণ বনে আগুনের ক্ষত

আপডেট : ২২ মার্চ ২০২২, ১৪: ০৫
বিস্তীর্ণ বনে আগুনের ক্ষত

গাজীপুরের শ্রীপুর রেঞ্জের অধীনে বনভূমির পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার একর। এর মধ্যে শ্রীপুর রেঞ্জের অধীনে ইতিমধ্যে জবরদখল হয়েছে ৬ হাজার ৩৪৯ একর। বাকি বনভূমির অর্ধেকই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মূলত বছরের ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বনের ভেতর জ্বলে আগুন। আগুনে পুড়ে যায় বনের ভেতর নতুন করে গজিয়ে ওঠা গজারিগাছের চারা।

বনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার কারণে একদিকে জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে বনের গাছপালা, অপরদিকে হুমকিতে জীববৈচিত্র্য। স্থানীয় সচেতন সমাজ ও বনসংশ্লিষ্ট সামাজিক সংগঠনগুলো বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতাকে এ জন্য দায়ী করছেন। অবিলম্বে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাঁদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীপুর রেঞ্জের অধীনে শিমলাপাড়া বিট অফিসের ২০০ গজের মাথায় শত শত একর বনভূমি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যত দূর চোখ যায় শুধু আগুনে পোড়ার ছাপ। অপরদিকে শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটের সিসিডিবি, পোষাইদ গ্রামের শত শত একর বনভূমি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। রাস্তার পাশ থেকে শুরু হয়ে বনের গভীর জঙ্গল পর্যন্ত বন পুড়ে গেছে।

শ্রীপুর সদর বিটের গাজীয়ারনে আগুনে পুড়ে গেছে কয়েক হাজার একর বনভূমি। এখনো সেখানে জ্বলছে আগুন। এ ছাড়া কাওরাইদ, গোসিংগা, রাথুরা সিংড়াতলী বিটের অধীনে বেশির ভাগ বনভূমি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী সাঈদ চৌধুরী বলেন, এখানে অনেক ধরনের অপরাধী থাকতে পারে। কিন্তু করণীয় ঠিক না করতে পারলে কী হবে, তা বনভূমির দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়। যে-ই অপরাধী হোক, তাকেই আইনের আওতায় আনা এবং বনে আগুন দেওয়া বন্ধ করার দায়িত্ব বন বিভাগেরই।

আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘বনভূমি বাঁচাতেই হবে। প্রয়োজনে বনভূমির জন্য আমরা রাস্তায় দাঁড়াব।’

ভাওয়ালগড় বাঁচাও আন্দোলনের মহাসচিব ড. এ কে এম রিপন আনসারী বলেন, প্রতিবছর ফাল্গুন আর চৈত্র মাস এলেই গজারি বন জ্বলতে শুরু হয়। বনে আগুন লাগানোর পেছনে বনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জড়িত থাকার অনেক কারণ রয়েছে।

বনে আগুন দেওয়ার কারণ হিসেবে রিপন আনসারী বলেন, বনভূমি পরিষ্কার হলে সেই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক অথবা স্থানীয় প্রভাবশালীরা সহজে দখলে নিতে পারে। এ জন্য বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, বনে ঘুরে দেখা যায় বেশির ভাগ রাস্তার অংশের বন বেশি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

শ্রীপুর রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা সদর বিট কর্মকর্তা মীর বজলুল রহমান বলেন, বনের পাশে জমির মালিকেরা অনেক সময় বনে আগুন দেন। কারণ বনের গাছের ডালপালা পাতা পড়ে জমিতে ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়, এ জন্য তাঁরা সুপরিকল্পিতভাবে বনে আগুন দিয়ে গাছপালা পুড়িয়ে দেন। সম্প্রতি বনে আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত প্রবীণ কয়েকজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল। এরপর বয়স বিবেচনায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মীর বজলুল রহমান বলেন, বনের আয়তন বিশাল। তাই বনে একবার আগুন ধরিয়ে দিলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া বন বিভাগের জনবল কম থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। আর জবরদখলকৃত ভূমি উদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। বনভূমি উদ্ধার করে কৃত্রিম বনায়ন করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত