Ajker Patrika

আনন্দাশ্রু

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৫১
আনন্দাশ্রু

দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু জাতির জনক কেমন আছেন, কেউ জানে না। তাঁকে হত্যা করার ছক কাটা হয়েছিল। দীর্ঘ নয় মাস তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল পাকিস্তানের কারাগারে।

দেশজুড়ে বিজয়ের উল্লাস। সেই উল্লাসের ভেতরে আবার শঙ্কা। বঙ্গবন্ধু কি বেঁচে আছেন? বেঁচে থাকলে কেমন আছেন? ১৯৬৬ সালের ৬ দফার পর থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন এই ভূখণ্ডের প্রতিচ্ছবি। তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানা যাচ্ছে না।

বঙ্গবন্ধুও জানতেন না, কী ঘটেছে এই নয় মাস। পাকিস্তানিরা আর এ দেশের দালাল রাজাকার-আলবদররা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে ভিটেবাড়ি, মানুষকে উচ্ছেদ করেছে নিজভূমি থেকে।

এসবের কিছুই জানতেন না বঙ্গবন্ধু। তিনি ভাঙবেন, তবু মচকাবেন না। মৃত্যু এলে আসবে, তা বরণ করতেও প্রস্তুত, কিন্তু কোনোভাবেই দেশবাসীর সঙ্গে বেইমানি করবেন না।

পাকিস্তানের ৯০ হাজার যুদ্ধবন্দীর ভবিষ্যৎ নিয়ে পাকিস্তানিরা তখন চিন্তিত। ফলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাদের ভাবনায় পরিবর্তন এসেছিল।

মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু গেলেন লন্ডনে। সেখানে সংবাদ সম্মেলনের পর ফোন করলেন ঢাকায়। কথা বললেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, বেগম মুজিবসহ আরও অনেকের সঙ্গে। কথা বলেছিলেন রাসেলের সঙ্গেও।

বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারের সঙ্গে রাসেলও ছিল গৃহবন্দী। শেখ কামাল আর শেখ জামাল গিয়েছিলেন যুদ্ধে।

বঙ্গবন্ধু রাসেলকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমরা কি সবাই বেঁচে আছ?’

এত দিন পর বাবার কণ্ঠস্বর শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে যায় শেখ রাসেল। সে বলে, ‘আব্বা, ওরা কি তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে? তুমি কবে আসবে? ওরা কিন্তু আমাদের খুব কষ্ট দিয়েছে। আব্বা, এখন আমরা সবাই ভালো আছি।’

রাসেল যখন কথা বলছিল, তখন সেই ঘরে উপস্থিত প্রত্যেক মানুষের চোখে ছিল জল। আনন্দের অনুভূতির সঙ্গে চোখের জলের নিবিড় সম্পর্কটি অনুভব করছিলেন সবাই।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ৯ জানুয়ারি, ১৯৭২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত