Ajker Patrika

শিক্ষা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২২, ১০: ৪৯
শিক্ষা

কাজী আনোয়ার হোসেন, যাঁর ডাকনাম ছিল নবাব। সেকালে তিনি বখে যেতে বসেছিলেন। স্কুলে যাওয়ার নাম করে বইখাতা নিয়ে চলে যেতেন ফজলুল হক হলের দক্ষিণ দিকে বকুলগাছের সারির ওদিকটায়। সারা দিন আড্ডা দিয়ে পরিশ্রান্ত হয়ে তারপর ফিরতেন বাড়ি। বিকেলের নাশতা দুধ-ভাত খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়তেন বাইরে। বাড়ির নিয়ম ছিল ফিরতে হবে সন্ধ্যার আগে। এসব তো আর চাপা থাকে না। একদিন বাড়ির লোকজন সেটা জেনে ফেলল। কাজী মোতাহার হোসেন তাঁর ছেলেকে যে পিটুনি দিলেন তাকে বলা যায় চোরের মার।

এর পর থেকে একটু একটু করে স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছে জেগেছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আতিকুল ইসলাম, যিনি প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের বড় ভাই। আতিকদের সূত্রেই মুকুল ফৌজে যাওয়া-আসা শুরু করেছিলেন নবাব। সেখানেই তাঁর ভাব হলো ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে। ওয়াহিদুল হকের কাছ থেকে বই ধার করতেন নবাব। নবাবের বড় বোন সন্জীদা খাতুন লক্ষ করলেন, ওয়াহিদুল হকের কাছ থেকে আনা বই বেশির ভাগ সময়ই ফেরত দেন না নবাব। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী রে, বই ফেরত দিলি না? কাজী আনোয়ার হোসেন একদিন ফট করে বলে বসলেন, ‘ওয়াহিদ ভাই আমাকে বই প্রেজেন্ট করেছেন।’

এটা যে ডাহা মিথ্যা, সেটা বুঝতে মোটেই কষ্ট হলো না সন্জীদা খাতুনের। একদিন ওয়াহিদুল হক এলে কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনেই তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওই বইটা কি আপনি নবাবকে দিয়েছেন?’ ওয়াহিদুল হক চকিতে একবার কাজী আনোয়ার হোসেনের দিকে তাকালেন, তারপর মাথা নামিয়ে খানিক চুপ করে থেকে একটা নিশ্বাস ফেললেন। বললেন, ‘হ্যাঁ, দিয়েছি।’ আসলে এটাও ছিল মিথ্যে কথা। কিন্তু সত্য ও মিথ্যের যে নানা চেহারা হতে পারে, সে কথাও বুঝলেন সন্জীদা খাতুন। নিজের মিথ্যে দিয়ে নবাবের মিথ্যেটা চাপা দিলেন, নবাবকেও যেন নীরবে তিরস্কার করলেন। ভবিষ্যতে যেন নবাব এ ধরনের মিথ্যে না বলে, তারও একটা গাইডলাইন পাওয়া গেল।

সূত্র: সন্জীদা খাতুন, অতীত দিনের স্মৃতি, পৃষ্ঠা ৭৩-৭৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত