Ajker Patrika

বাটার সাত নম্বর পাম্প-শু

সম্পাদকীয়
বাটার সাত নম্বর পাম্প-শু

পুজো হয়ে গেছে। রেডিওতে তখন একটা কবি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সঞ্জয় ভট্টাচার্য, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুধীন দত্তদের সঙ্গে জীবনানন্দও আমন্ত্রিত হয়েছেন সেই অনুষ্ঠানে। আধুনিক এবং আধুনিক নন—এ রকম দুই পক্ষই থাকবেন উপস্থিত। বলবেন কথা, শোনাবেন নিজের লেখা কবিতা।

ভূমেন্দ্র গুহ কবি সম্মেলনের দিন দুপুরবেলা জীবনানন্দ দাশের বাড়িতে হাজির হলেন। দেখলেন, কবি খুবই চিন্তাক্লিষ্ট। কেন তিনি এ রকম চিন্তার মধ্যে পড়েছেন, সেটা বোঝার সাধ্য কার? ভূমেন্দ্র গুহ ভেবেছিলেন দিদির (জীবনানন্দ দাশের বোন) ত্রিকোণ পার্কের বাড়িতে বসে রেডিওর অনুষ্ঠানটি শুনবেন। সে সময় তো আর সবার ঘরে ঘরে রেডিও ছিল না। সে ছিল সাধারণের হাতের নাগালের বাইরে। ত্রিকোণ পার্কের বাড়িতে যাওয়ার আগে ল্যান্স ডাউনে জীবনানন্দের বাড়িতে এসে কবির এই অবস্থা দেখে একটু ঘাবড়ে গেলেন ভূমেন্দ্র।

চিন্তিত মুখে জীবনানন্দ তখন বলছেন, ‘প্রেমেন, সুধীনবাবু আসবেন, আমাকেও তো যেতে হবে, দেখ তো ব্যাপারটা কেমন গোলমেলে হয়ে গেল!’
সমস্যাটা কী, তা না বুঝেই ভূমেন্দ্র দৌড়ুলেন ত্রিকোণ পার্কে দিদির বাড়িতে। দিদিকে নিয়ে ফিরলেন। দিদি ঢুকে গেলেন দাদার ঘরে। খানিক পর বেরিয়ে এলেন। ভূমেন্দ্র অপেক্ষা করছিলেন। দিদি বললেন, ‘চলো, একটু বাজার ঘুরে আসি।’

কী নিয়ে চিন্তিত ছিলেন জীবনানন্দ দাশ, সেটা বোঝা গেল একটু পরেই। বাড়ির কাছেই গড়িয়াহাটা। গড়িয়াহাটার বাজারে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে দিদি ঢুকলেন বাটার দোকানে। কিনলেন এক জোড়া সাত নম্বরি পাম্প-শু।

এতক্ষণে বোঝা গেল জীবনানন্দ দাশের চিন্তার কারণটি। তিনি যে কাপড়ের জুতো পায়ে দিতেন, সেটির এক পাটির কড়ে আঙুলের জায়গাটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। তাই ওটা পরে হাঁটলে কড়ে আঙুলটি বেরিয়ে পড়ত। এ অবস্থায় কী করে রেডিওতে যাবেন, অভ্যাগতদের সামনাসামনি হবেন, সেটাই ছিল কবির দুশ্চিন্তার কারণ।

জুতা পেয়ে আশ্বস্ত এবং আত্মস্থ হয়ে কবি গেলেন কবি সম্মেলনে। সেখানে কথার সঙ্গে নিজের কবিতাও পড়লেন তিনি। 

সূত্র: ভূমেন্দ্র গুহ, আলেখ্য: জীবনানন্দ, পৃষ্ঠা ১৮-১৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত