Ajker Patrika

স্মার্ট গদ্যের দুই রূপকার

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২২, ১৯: ২১
স্মার্ট গদ্যের দুই রূপকার

কাজী আনোয়ার হোসেন আর হুমায়ূন আহমেদের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি করেছে জন্মদিন-মৃত্যুদিন। আজ মাসুদ রানার স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্মদিন। আজ হিমু-মিসির আলির স্রষ্টা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুদিন।

এখন মাসুদ রানার জনপ্রিয়তা কেমন, সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু আমাদের কৈশোরে লুকিয়ে পড়া হতো মাসুদ রানা। বড়রাও হয়তো লুকিয়ে পড়তেন, কিন্তু সেটা তো আমাদের জানা ছিল না। আমরা পড়তাম লুকিয়ে লুকিয়ে। মনে আছে সত্তরের দশকের শেষের দিকে বাংলামোটর থেকে ৬ নম্বর বাসে উঠে নেমেছিলাম মৌচাকে। সেখানে ছিল জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনের একটি বড় দোকান। দুরু দুরু বক্ষে সে দোকান থেকে কিনেছিলাম ‘ধ্বংস পাহাড়’। মাসুদ রানা সিরিজের প্রথম বই এবং হ্যাঁ, সেটা ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের লেখা। এরপর মাঝে মাঝেই সেই দোকানে হানা দিয়েছি, ‘আই লাভ ইউ ম্যান’, ‘হ্যালো, সোহানা’, ‘দুর্গম দুর্গ’, ‘শত্রু ভয়ঙ্কর’, ‘রানা, সাবধান’-এর জন্য। নামগুলো সব এখন আর মনে নেই। কিন্তু মনে আছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমুদ্রবন্দর, শহরের বর্ণনা, নতুন গাড়ি আর নির্জলা হুইস্কির কথা! আর সোহানা নামের একটি মেয়ে কারণে-অকারণে প্রিয় হয়ে উঠেছিল তখন।

মাসুদ রানা লুকিয়ে পড়তে হতো আমাদের দেশের ট্যাবুর কারণে। রোমান্সের বর্ণনা কিশোর মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে বলে অভিভাবকেরা মনে করতেন। দুই হাঁটু দিয়ে যৌবনের মাথাকে চেপে রাখার যে অশ্লীল প্রবণতা ছিল আমাদের অভিভাবকদের, এখন তা কিছুটা শিথিল হয়েছে কি না, জানি না। শুধু এটুকু বলতে পারি, যখনই কোনো বিষয়কে নিষিদ্ধ করা হয়, তখনই তার প্রতি কৌতূহল বাড়ে এবং সেদিকেই ধাবিত হয় মন। আমাদের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে। মাসুদ রানার কয়েক পৃষ্ঠা রোমান্স যে এমন কোনো গর্হিত বিষয় ছিল না, সেটা এখন যে কেউ বুঝতে পারবে। শুধু নীতিশিক্ষা দিয়ে মানুষের নৈতিক ভুবন তৈরি করা যায় না, যদি তার ভাবনার জগতে মুক্তি না ঘটে। ইউরোপের যেকোনো সমুদ্রসৈকতে গেলে স্বল্পবসনা নারী দেখলে কারও মনে যৌন আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে না, কারণ চোখ তাকে অশ্লীল দৃষ্টিতে দেখে না। আমাদের দেশে সেই দেখার চোখকেই বন্দী করে রাখায় বেড়েছে চোখের ও দেহের যৌন ক্ষুধা। যার প্রকাশ ঘটে যত্রতত্র, এমনকি তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনাও এখানে বিচিত্র নয়।

কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর ভাষার স্মার্টনেস দিয়ে আমাদের ছুঁয়েছিলেন। তরুণদের ‘আউট’ বইমুখী করেছিলেন।

এ পথেই হেঁটেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। পাঠক তৈরি করেছিলেন তিনি। আমাদের বাড়িতে মেজ ভাই শাহীন রেজা নূর যখন ‘নন্দিত নরকে’ আর ‘শঙ্খনীল কারাগার’ নিয়ে এলেন সত্তর দশকের গোড়ার দিকে, স্বাধীনতাপ্রাপ্তির বছর দুয়েকের মধ্যেই বোধ হয় বের হয়েছিল বই দুটি। পড়তে গিয়ে ধাক্কা খেয়েছিলাম, মনে পড়ে। নিম্নমধ্যবিত্ত জীবনের যে কাহিনি তুলে এনেছেন লেখক, তা সহ্য করা কঠিন ছিল। লেখককে খুবই নির্মম বলে মনে হয়েছিল। উপন্যাসের চরিত্রগুলো যেন ঘুরে বেড়াচ্ছিল আমাদের চারপাশে।

এরপর যখন নাটক তৈরি হলো, তখনো একইভাবে মোহিত হয়েছিলাম সে লেখায়। বন্ধু রানা ধার দিয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘শ্যামল ছায়া’। সে বই পড়েও মোহিত হয়েছিলাম। ভাষার যে শক্তি তাতে ছিল, সেটা আমরা টের পেয়েছি। এরপর তো হিমু আর মিসির আলি দিয়ে তিনি আমাদের পরের প্রজন্মকে মোহগ্রস্ত করে রেখেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদের বই বিক্রি হতো সবচেয়ে বেশি। সারি বেঁধে মেলা থেকে তাঁর বই সংগ্রহ করার দৃশ্য একটি ঘটনা বটে। সংস্কৃতির বিভিন্ন পথে হেঁটেছেন তিনি। নাটক, চলচ্চিত্রও তাঁকে টেনেছে। তবে সরল বাক্যে কথা বলে যাওয়ার জাদুকরি ক্ষমতাই তাঁকে পাঠকপ্রিয় করেছে, এ কথা বললে ভুল বলা হবে না। হুমায়ূন আহমেদের মাধ্যমে বাংলা বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে পাঠক, এটাও সত্য। স্মার্ট গদ্যের দুই রূপকারের প্রতি শ্রদ্ধা।

লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত