Ajker Patrika

চরের ভরসা নারী শ্রমিক

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ ও আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২২, ১২: ৩২
চরের ভরসা নারী শ্রমিক

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা চরে কর্মব্যস্ত সময় কাটছে নারী শ্রমিকদের। আলু, মিষ্টি কুমড়া, সরিষা, তামাকসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল ঘরে তুলছেন কৃষকেরা। আর এসব খেতে কাজ করা এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিকই নারী। মাঠে কাজ করার ক্ষেত্রে কদর থাকলেও তাঁরা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না।

পূর্ব মহিপুর চরে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক একাব্বার আলী আলু খেতে একাই লাঙলের ফালি দিয়ে কান্দি (সারি) চাষ করে দিচ্ছেন। সেসব কান্দি থেকে আলু সংগ্রহ করছেন একদল নারী। একাব্বার আলী একা কেন? জানতে চাইলে বলেন, ‘ভাই পুরুষ মাইনষের দাম খুব। আলু তোলা কামোত পুরুষ মানুষোক দিয়া পোষায় না। একটা পুরুষের টাকা দিয়া দুইটা মহিলা কৃষাণ পাওয়া যায়। ওই জন্যে মুই একলায় কান্দি চাষ করে দেওচু। ওমরা (নারী) তাক তোলোছে। উৎপাদন খরচ কমার নাগবে তো, নাইলে লস হইবে। এমনি বাজারোত আলুর দাম কম।’

একাব্বারের আলুখেতের পাশে বোরো খেত পরিচর্যা করছিলেন আরেক দল নারী। ওই নারী দলের শ্রমিক কাজলী বেগম। তাঁর বাড়ি মহিপুর গ্রামে। তিনি বলেন, ‘বাবা, চিরদিনই নারীরা অবহেলায় থাকিল। হামার ঘরোত থাকির কথা কিন্তু সংসারোত অভাব ওই জন্যে মাঠোত কাজ করির আলছি। কিন্তু এটে আসিও হামরা সঠিক দাম পাই না। পুরুষের থাকি বেশি কাম করিয়াও অর্ধেক টাকা পাই। পুরুষ কৃষাণোক একবেলা ভাতও খিলায়। হামরা তাকও পাই না।’

উপজেলার সাতটি চরের অন্তত ২০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু পূর্ব মহিপুর চরেই নয় উপজেলার চর ছালাপাক মহিষাশুর, কালির চর, রমাকান্ত, মটুকপুর, উত্তর চিলাখাল, মধ্য চিলাখাল, বিনবিনা, খলাইর চর, শখের বাজার, আবুলিয়া, সাউদপাড়া, আলেকিশামত, পাইকান হাজীপাড়া, ব্যাঙপাড়া, চর নোহালী, বাগডহরা, আলালের চর, নীলারপাড়, তালপট্টির চর, হাজীরপাড়া নরসিংহ, ছালাপাক, কালির চর, চব্বিশ সাল, চর মহিপুর, মধ্য ইচলী, পশ্চিম ইচলী, বিনবিন চরে ফসল রোপণ ও উৎপাদনের একমাত্র ভরসা নারী শ্রমিকেরাই।

চব্বিশ সাল চরে কথা হয় নারী শ্রমিক নার্গিস বেগমের সঙ্গে। দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর আয়ে সংসার চলে। নার্গিস বেগম বলেন, ‘এই যে চরখান দ্যাখোছেন। আইজ খেতোতে সবুজ হইছে। তাক হামারগুলোর জন্যে। হামরা না হইলে এই চরোত ফসল নাগা কাম কায় করিল হয়। কষ্ট করি কৃষাণী করি। কিন্তু তাঁর উপযুক্ত মজুরি পাই না।’

নার্গিসের পাশে থাকা আলেজা খাতুন নামের আরেক নারী শ্রমিক বলেন, ‘তোমরায় কন ২০০ টাকাত কি অ্যালা সংসার চলে। হাট-বাজারোত সউগ জিনিসের দাম চড়া। সকাল আটটায় আসি বিকেল পাঁচটায় যাই। সারা দিনটায় মাঠোত কাজ করতে যায়। একজন পুরুষ কাজ করলে দেওছে ৪০০ টাকা। আর হামাক দেয় ২০০ টাকা। নারী দেখিয়া হামার দাম কম। কামতো কম করি না।’

ওই চরে কথা হয় চর চব্বিশ সাল গ্রামের কৃষক আবু হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাই নারী শ্রমিক না হলে চরে আবাদ করা খুব কষ্টকর হতো। নারী শ্রমিকেরাই একমাত্র ভরসা। শুধু আমাদের চরেই নয়, সব চরের নারী শ্রমিককে ২০০ টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। তাই আমিও দেই। তাঁদের কাজ অনুযায়ী মজুরি সত্যি কম। এখন আবাদেও খরচ বেড়েছে। ফসল বিক্রির পর তেমন লাভ থাকে না। আমরাও নিরুপায়।’

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমি আক্তার বলেন, ‘সরকারি কাজ যেমন টিআর, কাবিখা, কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজে নারী-পুরুষ সবাইকে সমান মজুরি দেওয়া হয়। সরকার চেষ্টা করছে বেসরকারি কাজগুলোতেও নারী-পুরুষের যে মজুরি বৈষম্য আছে তা দূর করতে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মোদির সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ

অনেক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত, দাবি পুতিনের শীর্ষ সহযোগীর

মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ‘খোররামশহর-৪’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত