Ajker Patrika

শতাধিক ঘরবাড়ি যমুনার পেটে

জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর
আপডেট : ২৭ মে ২০২২, ১৫: ৩২
শতাধিক ঘরবাড়ি যমুনার পেটে

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে ভাঙন। গত ৩-৪ দিনের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছে শতাধিক বাড়িঘর। ভাঙন থেকে রক্ষা পায়নি ফসলি জমি ও গাছপালা। হুমকির মুখে থাকা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ভেঙে মালামাল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল গ্রামের চিত্র এটি।

এলাকাবাসীর দাবি, যমুনার তীব্র ভাঙনে পাকরুল গ্রামটির আয়তন একেবারে ছোট হয়ে আসছে। ৯০ শতাংশ এলাকা ইতিমধ্যে নদীতে চলে গেছে। বাকি আছে ১০ ভাগ। এটুকু চলে গেলে গ্রামটির নাম মুছে যাবে দেশের মানচিত্র থেকে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে।

জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত এক সপ্তাহে বেড়েছে যমুনা নদীর পানি। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর এবং মাদারগঞ্জের কয়েকটি স্থানে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ ইউনিয়নের পাকরুল গ্রামে। গত তিন দিনে এই গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর, গাছপালা, মসজিদ-মাদ্রাসা, ফসলি জমি এবং তিনটি গুচ্ছগ্রাম নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ১৭ নম্বর পাকরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশে ২০১৩ সালে ৫১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিদ্যালয়টি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গ্রামটির প্রায় ৮০০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে।

ভাঙনকবলিত এলাকায় দেখা হয় ৬৫ বছর বয়সের মমেনা বেগমের সঙ্গে। মমেনার সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে যমুনা। বাড়িঘর, গাছপালা, ফসলি জমি আর গোয়ালঘর, কিছুই নেই তাঁর। মমেনা বেগমের সঙ্গে কথা বলতেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘কী শুনতে চান, আপনাদের কয়ে কী হবু, সবকিছুই শেষ অইছে, এখন অন্য বাড়িতে ডেরা তুইলে থাহি, যেভাবে ভাঙতাছে অনুও তো থাকবার পামু না। মন্ত্রী আইসে দেইখে গেল। বাঁধ করবার চাইল, কিছু তো করল না। আজ যদি বাঁধ দিতে, তাহলে বাড়িঘরছাড়া হতাম না। মূর্খ মানুষ, ঢাহা শহর চিনি না। কী কইরা খামু, কোথায় যামু।’

পাকরুল গ্রামের রেহান আলী বলেন, ‘সব শেষ, এখন কী করমু, কোথায় যামু। ১০ বছর ধরে যমুনা ভাঙতাছে। মাদারগঞ্জ উপজেলা থেকে এই গ্রামটি মুছে গেল। গ্রামে একটা স্কুল ছিল, তা-ও শেষ হয়ে গেল। ছেলে-মেয়ে আর লেখাপড়াও করতে পারবে না। বাড়িঘর নাই। অন্যের জমিতে আছি। পাকরুল গ্রামের ৯০ ভাগই নদী খাইছে। ১০ ভাগ আছে, সেটাও আর থাকব না। যেভাবে ভাঙতাছে দুই-তিন দিনের মধ্যে বাকি যা আছে, নদীতে যাবো।’

বৃদ্ধ জহির ফকির নদীর কিনারে গাছ কাটছিলেন। তিনি বলেন, ‘কিছুই নাই। গাছটা বিক্রি করে চাল-ডাল কিনে খাব। গরু-ছাগল সব শেষ করছি। নদী ফকির করে দিয়েছে। কী ছিল না আমার, সবই ছিল। দুই-তিন একর জমিতে ফসল করতাম, গোয়ালভরা গরু ছিল। বাড়ির উঠানে ধানের পাল্লা ছিল। আজ সেগুলো স্বপ্নের মতো। সরকার আমাদের রক্ষা করল না। এই এলাকার মানুষ নৌকায় ভোট দেয় কিন্তু এলাকার মন্ত্রী-এমপিরা এখানে একটা বাঁধের ব্যবস্থা করল না।’

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গত বছরে গ্রামটির দুই হাজার বাড়িঘর, গাছপালা, ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। প্রায় ৯০ ভাগই নদীতে চলে গেছে। বাকি ছিল গ্রামটির ১০ ভাগ। যমুনার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে শতাধিক বাড়িঘর, গাছপালা, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। গ্রামে একটি স্কুল ছিল, সেটাও শেষ হয়ে গেল। আর কিছুই নেই। বাড়িঘর-জমিজমা সব হারিয়ে অন্যের জমিতে ডেরা তুলে বসবাস করছেন অনেকে। তাঁদের দাবি, দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে মাদারগঞ্জ উপজেলার মানচিত্র থেকে পাকরুল গ্রামটি মুছে যাবে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন, যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে দেওয়ানগঞ্জ থেকে ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ এবং সরিষাবাড়ীর পিংনা এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে নদীর গভীরতাসহ নানা পরিকল্পনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত