Ajker Patrika

‘টিংকুর মা, আমাকে নিতে এসেছে’

ডা. ফজলে রাব্বী
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ২৭
‘টিংকুর মা, আমাকে নিতে এসেছে’

১১ ডিসেম্বর থমথমে হয়ে গেল ঢাকা শহর। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ফজলে রাব্বী ছিলেন তাঁর কাজের জায়গায়। আরও কয়েকজন অধ্যাপক ছিলেন সেখানে। ডা. রাব্বীর স্ত্রী জাহানারা রাব্বী গেলেন সেখানে। ইতস্তত করে বললেন, ‘দেখুন, সবাই বলছে শহর ছেড়ে চলে যেতে। আর বোধ হয় এখানে থাকা ঠিক হবে না।’ কেউ কোনো উত্তর করলেন না।

বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে উঠে ডাক্তার রাব্বীকে তিনি আবার বললেন, ‘দেখো, কোথায় যেতে হয়।’

ডা. রাব্বী বললেন, ‘আচ্ছা, দেখি। কারও সঙ্গে আলাপ করে আজ বিকেলে কিছু একটা ঠিক করা যাবে।’

সেদিন বেলা ৩টার সময় কারফিউ জারি করা হলো।

জাহানারা রাব্বী বলে উঠলেন, ‘টিংকুর আব্বা, ওরা কি জানে আমরা আজ পালাব?’

ডা. রাব্বী বিমূঢ় হয়ে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যুদ্ধের সময় পৃথিবীর কোথাও কোনো কারফিউ দেওয়ার নিয়ম নেই। এবার হয়তো ওরা আমাদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে মারবে।’

১৪ ডিসেম্বর রাতে জাহানারা রাব্বী একটি স্বপ্ন দেখলেন। একটা সাদা সুতির চাদর গায়ে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে জাহানারা জিয়ারত করছেন কোথাও, যেখানে চারটা কালো থামের মাঝখানে সাদা চাদরে ঘেরা কী যেন আছে।

১৫ ডিসেম্বর সকালে এই স্বপ্নের কথা ডা. রাব্বীকে জানালে তিনি বললেন, ‘তুমি বোধ হয় আমার কবর দেখেছ টিংকুর মা।’

দুপুরে কারফিউ। তিনি খাবার টেবিলে বসলেন। সেদিন ছিল বাসি খাবার কিন্তু তিনি বললেন, ‘আজকের দিনে এত ভালো খাবার খেলাম। খুব ভালো খাওয়ালে তুমি।’

বাড়ির বাবুর্চি এসে ফিসফিস করে বলল, ‘সাহেব, ওরা বাড়ি ঘিরে ফেলেছে।’

তিনি সোজা বারান্দায় দাঁড়ালে দেখলেন আলবদর, সেনাবাহিনী এবং একটা কাদালেপা সাদা মাইক্রোবাস। তিনি নিচু গলায় বললেন, ‘টিংকুর মা, আমাকে নিতে এসেছে।’

তিনি আর ফিরে আসেননি।

সূত্র: জাহানারা রাব্বী, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চিকিৎসক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত