Ajker Patrika

‘ট্রেন চালু থাকলে তো পাঁচ শ টাকা আহে, অহন এক শ না’

সাবিত আল হাসান, নারায়ণগঞ্জ
‘ট্রেন চালু থাকলে তো পাঁচ শ টাকা আহে, অহন এক শ না’

নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে মুচির কাজ করেন বিক্রম দাস। বয়স ষাটের ওপর। থাকেন শহরের জিমখানা বস্তিতে। খুপরি ঘরে ৯০ বছর বয়স্ক মা, স্ত্রী আর ছোট ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। পরিবারের আয়-উপার্জনের দায়িত্ব এখনো বিক্রম দাসের ওপরই। ৩৫ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের রেলস্টেশনে জুতা সেলাইয়ের কাজ করছেন তিনি। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে সম্প্রতি ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপার্জনও কমে গেছে। উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারে কীভাবে চলবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা।

কয়েক দিন আগে রেলস্টেশনে কথা হয় বিক্রম দাসের সঙ্গে। বর্তমান দ্রব্যমূল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চলতাছি কোনোরহম, চাইলের দাম থিকা শুরু কইরা সবকিছুর দাম বাড়াইয়া দিসে; কিন্তু কোনোমতে চলতে তো হয়। দুই বেলারটা এক বেলা খাইয়া ঘর তে বাইর হই। ভুক ভুক থাইকা চলি আর কী করুম? এমনেই চলতাছে সব। মাইয়ার বিয়াতে মুরগি খাওয়াসি। মাইন্সেরে ডাইল-ভাত তো খাওয়াইতে হয়, নাইলে তো মাইন্সে বদনাম কইব।’

কথায় কথায় বিক্রম দাস বললেন, ‘মাত্র ছয় মাস আগে ছোট মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বড় মেয়ের বিয়ে দিছি অনেক আগে। দুই মেয়ে এখন থাকে জামাইর সাথেই। এক জামাই কাজ করে গ্রিলের, আরেকজন সিএনজি ওয়ার্কশপে। ছেলেটা হোসিয়ারি কারখানায় কাজ শিখছে। কোনো বেতন দেয় না তাকে। এরই মধ্যে ছোট মেয়ের জামাইকে দেওয়া যৌতুকের কিস্তি আটকে গেছে। আগে পরিশোধ করা হয়েছে ২৬ হাজার, আরও ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে ছয় মাসের মধ্যে। কীভাবে সেই টাকা জোগাড় হবে জানি না। এর বাইরে ঘরভাড়া, দৈনন্দিন বাজার খরচ তো আছেই।’

ট্রেন বন্ধের বিষয়ে বিক্রম দাস বলেন, ‘ট্রেন চালু থাকলে তো দিনে পাঁচ-ছয় শ টাকা আহে। আজকা তো এক শ টাকাও আইল না। কী করমু বুঝতাছি না আর মাইন্সে এখন জুতা সিলায় কম, পাল্টায় বেশি। আগে আয়-ইনকাম ছিল, এখন কইমা গেছে।’

স্থান পরিবর্তন করবেন কি না এমন প্রশ্নে বলেন, ‘জায়গা তো ছাড়ুম না। এখানেই বইয়া পার করছি ৩৫ বছর। আর কই যামু? এই রেলইস্টিশন আমার লগে মিশ্যা গেছে।

অন্য কোথায় আমার যাওয়া অইত না। এখন বয়স অইয়া গেছে, দুনিয়াও অন্যরকম অইয়া গেছে।’

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা চাইবেন কি না জানতে চাইলে বিক্রম দাস বলেন, ‘আমি ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে থাকি। করোনার সময় অসিত দা (১৫ নম্বর কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস) সাহাইয্য-সহযোগিতা করছিলেন। মাইয়ার বিয়ার সময় গেছিলাম, ৫০০ টাকা দিসেন। করোনার সময় সাহাইয্য করছেন, এখন কি ট্রেন বন্ধের লিগা কে সাহাইয্য করব? এমনেই চলতে অইব আমাগো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

মধুপুরে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত