Ajker Patrika

হবিগঞ্জে ৯ মাসে ১২২ অপমৃত্যু

কাজল সরকার, হবিগঞ্জ
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ০২
হবিগঞ্জে ৯ মাসে ১২২ অপমৃত্যু

হবিগঞ্জে বেড়েছে অপমৃত্যুর ঘটনা। পারিবারিক কলহসহ ব্যক্তিগত নানা সমস্যার কারণে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকে। চলতি বছরের ৯ মাসে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন ১২২ জন। এর মধ্যে বিষপানে ৫৬ এবং ফাঁস নিয়ে ৬৬ জন।

একসময় আত্মহত্যার প্রবণতা নারীদের মধ্যে বেশি থাকলেও বর্তমানে পুরুষদের মধ্যে বেড়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ বলে জানায় পুলিশের একাধিক সূত্র।

জেলা পুলিশের ডিএসবি শাখা থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে অপমৃত্যু হয়েছে ১১১টি। এর মধ্যে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয় ৩৪ জনের ও বিষপানে মৃত্যু হয় ৪৭ জনের। ২০১৯ সালে ১৩২টি, এর মধ্যে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয় ৭৪ জনের ও বিষপানে ৫৮। ২০২০ সালে ১৩৬টি, এর মধ্যে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয় ৯০ জনের ও বিষপানে ৪৬ মৃত্যু হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় অপমৃত্যু হয়েছে ১২২ জনের। এর মধ্যে বিষপানে ৫৬ এবং ঝুলন্ত অবস্থায় ৬৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। জানুয়ারিতে জেলায় ৯ জনের অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও মে এবং জুনে মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণে। মে মাসে ১৭ জন এবং জুনে ১৮ জন আত্মহননের পথ বেছে নেন।

জেলায় আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি বানিয়াচং উপজেলায়। এখানে গত ৮ মাসে আত্মহত্যা করেছেন ৩১ জন। আর সবচেয়ে কম লাখাইয়ে। এখানে ৮ মাসে আত্মাহুতি দিয়েছেন মাত্র একজন।

এ ছাড়া চলতি বছর হবিগঞ্জ সদরে ১৩, বানিয়াচং ৩১, আজমিরীগঞ্জ ৭, নবীগঞ্জ ১৭, বাহুবল ৯, চুনারুঘাট ১৯, লাখাই ১, মাধবপুর ১৭ এবং শায়েস্তাগঞ্জ পাঁচজন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।

বেশ কিছু ঘটনার তদন্তের পর ‘আত্মহত্যার’ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে পুলিশ। পারিবারিক বিভিন্ন কলহ, মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয় এবং প্রেমসংক্রান্ত বিষয়কে এর কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। তবে পারিবারিক কলহের জেরে নারীরা এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণে পুরুষেরা এ পথ বেছে নিচ্ছে।

আর তরুণদের একটি বিরাট অংশের ‘আত্মহত্যা’র কারণ হিসেবে পাওয়া গেছে প্রেমঘটিত ঘটনা। এর মধ্যে প্রেমে বিচ্ছেদ এবং প্রিয় মানুষের সঙ্গে বিয়ে না হওয়া।

পুলিশ বলছে, জেলায় বেশ কয়েকজন তরুণের আত্মহত্যার ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে কোনো কারণই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের মধ্যে পাইলসের সমস্যা পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পাইলসের সমস্যায় ভোগার কারণে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু না বলতে পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) বলেন, ‘আত্মহত্যার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। আমি সম্প্রতি যতগুলো আত্মহত্যার তদন্ত করেছি, তার মধ্যে বেশি পেয়েছি পারিবারিক কলহ এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়া। এ ছাড়া তরুণ-তরুণী বা কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার বেশি কারণ প্রেম সংক্রান্ত বিষয়।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এসব আত্মহত্যার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নির্দিষ্ট কিছু কারণ পেয়েছে। এর মধ্যে পারিবারিক বিভিন্ন কলহ, মানসিক বিপর্যয় এবং প্রেমসংক্রান্ত বিষয় বেশি। এ ছাড়া একটি কারণ আমাদের অবাক করেছে। আত্মহত্যার কারণ তদন্তের পর ধারণা করা হচ্ছে পাইলসের সমস্যায় ভোগার কারণে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু না বলতে পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।’

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপে উঠে এসেছে দেশের অর্ধেক মানুষ এখন বিষণ্ন। গত দুই বছরে বিষণ্নতা বেড়েছে আড়াই গুণ। বর্তমানে ৪৬ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে, যা ২০১৮ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আখলাকুজ্জামান বলেন, আত্মহত্যা বাড়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। সামাজিক অবক্ষয়, হতাশা থেকেই মানুষ সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করছে। আত্মহত্যা কমানোর জন্য পরিবার ও সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত