বদলে যাওয়া শান্ত

তাঁকে নিয়ে যে মাত্রায় ব্যঙ্গ-রসিকতা হয়েছে দর্শকদের কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, সেটি নিয়ে অনেক আক্ষেপ ঝরেছে নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠে। গত ডিসেম্বরে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শান্ত আউট হওয়ার পর গ্যালারির গর্জন দেখে যে কারও মনে হতে পারত, এই বুঝি রোহিত শর্মা না হলে বিরাট কোহলি আউট হয়েছেন!

একই স্টেডিয়াম না হলেও গল্পটা গ্যালারিরই। গতকাল ম্যাচ শেষের ২০ মিনিট পর সংবাদ সম্মেলনে এলেন শান্ত। গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল, ‘ওয়েল ডান শান্ত।’ শান্ত মিটিমিটি হাসলেন। সময় কত দ্রুত বদলে যায়। তাঁর দুর্দান্ত এক ইনিংসেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ১৫৭ রান। উইকেট কিছুটা মন্থর। কিছু বল থেমে থেমেও আসছিল। রান তাড়া তাই সহজ ছিল না বাংলাদেশের। সেখানে শান্তর ২৭ বলে ফিফটি এবং ৩০ বলে ৫১ রানের ইনিংসে ম্যাচের গতিপথ বদলে দেয়। যে ইনিংসকে টার্নিং পয়েন্ট বলেছেন সংবাদ সম্মেলনে ইংলিশদের প্রতিনিধি হয়ে আসা ফিল সল্ট। শেষ ৫ ওভারে ইংলিশরা তোলে মাত্র ৩০ রান।

এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল কি না প্রশ্নে ইংলিশ ওপেনার বললেন, ‘আমার মনে হয় ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট শান্তর ইনিংস। রান তাড়ায় শান্ত অসাধারণ ইনিংস খেলেছে।’

শান্তর অসাধারণ ব্যাটিংয়ে টি-টোয়েন্টিতে ৫০তম জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মার্ক উডের টানা ৪ বলে ৪টি চার মেরেছেন। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যায় শান্ত বলছিলেন, ‘বল দেখেছি আর শট খেলেছি। ও রকম কিছু ছিল না। গ্যাপটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। সে কারণে হয়তো বাউন্ডারিগুলো মারতে পেরেছি।’

শান্তর ব্যাট হাসছে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে। তবে বিশ্বকাপের ধীরে খেলা নিয়ে সমালোচনা শুনেছেন। সমালোচনা হয়েছে বিপিএলেও। দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছিল, শান্তর স্ট্রাইক রেট নিয়ে। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছেন, বিপিএলের খেলাটাই যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়ে আসেন তাঁর শিষ্যরা। শান্তও বললেন একই কথা, ‘বিপিএলে আমরা যেভাবে ব্যাটিং করেছি, যে মন-মানসিকতা ছিল আজও (গতকাল) সেভাবে ব্যাটিং করেছে সবাই, ভিন্ন কিছু কেউই করতে চায়নি। এখন ব্যাটাররা অনেক স্বাধীনতা নিয়ে খেলছে।’

নিজের ইনিংস নিয়ে শান্তর ব্যাখ্যা তো আগেই বলা হলো। বল তিনি শুধু দেখেছেন আর মেরেছেন— বিষয়টা কি আসলে এতই সহজ? এমন ইনিংস খেলতে আত্মবিশ্বাস টনটনে থাকতে হয়। এই রান করার আত্মবিশ্বাসটা যে তিনি পেয়েছেন গত অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ থেকে, সেটিই বলছিলেন শান্ত, ‘এমন বড় টুর্নামেন্টে গিয়ে যখন রান করবেন তখন সেটা আত্মবিশ্বাস জোগায়। ওটাই শুধু চেষ্টা করি যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাটিং করার। কিন্তু প্রতিটি দিনই নতুন দিন, আগের কিছু মাথায় থাকে না। একটা ভালো লাগা কাজ করে। যখনই ব্যাটিংয়ে যাই নতুন করে শুরুর চেষ্টা করি।’

টি-টোয়েন্টি দল ঢেলে সাজানোর চেষ্টায় আছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সে লক্ষ্য রনি তালুকদার, তৌহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন পাটোয়ারিরা দলে সুযোগ পেয়েছেন।

এর মধ্যে রনি আট বছর ও শামীম দুই বছর পর জাতীয় দলে ফিরেছেন। এত দিন পর ফিরে ড্রেসিংরুমে মানিয়ে নিতে তাঁদের কোনো সমস্যা হয়নি বলে মনে করেন শান্ত, ‘দলের পরিবেশ খুবই ভালো। মনে হয় না এত দিন পর তাদের ফিরে আসায় মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যা হয়েছে। কারণ, বিপিএলে আমরা খেলেছি, ঘরোয়া ক্রিকেটেও এক সঙ্গে খেলি। যদিও এটা আন্তর্জাতিক পর্যায়। ড্রেসিংরুমে আমাদের খুবই ভালো পরিবেশ। এই জিনিসটা আমাদের ভালো ড্রেসিংরুমে। যেই নতুন আসুক তার কখনই মনে হয় না নতুন বা প্রথম এসেছি কিংবা অনেক দিন পর এসেছি।’

বাংলাদেশ এবার চট্টগ্রামে এসেছিল ওয়ানডে সিরিজ হেরে। আর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছে টি-টোয়েন্টি সিরিজটা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে। আগামী পরশু মিরপুরে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি।

এবার বাংলাদেশের সিরিজ জেতা উচিত বলে মনে করেন শান্ত, ‘এখন যে অবস্থায় আছি এখান থেকে সিরিজ জেতা উচিত। তবে এখনো আমাদের নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেলতে হবে।’