মাসুদ উর রহমান
টানা চার-চারটি ঈদ দেশবাসী উদ্যাপন করেছে উৎকণ্ঠিত চিত্তে, আনন্দহীন পরিবেশে। আত্মীয়-আপনজন তথা প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঈদ-আনন্দ ভাগাভাগি করার যে চিরায়ত ঐতিহ্য—তাতে ছেদ পড়েছে নিদারুণভাবে। এ সময়টায় শুধু যে উৎসব আনন্দ থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে তা-ই নয়, বরং ছোঁয়াচে করোনার করালগ্রাস থেকে নিজেকে তথা পরিবারকে বাঁচাতে গৃহবন্দিত্বের কাছে করেছে অসহায় আত্মসমর্পণ।
বছর ঘুরে আবারও সমাগত ঈদ উৎসব। ইতিমধ্যেই নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। এ ক্ষেত্রে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষদের ভোগান্তির চিত্রটিই সংবাদমাধ্যমে বেশি আসছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনে আগাম টিকিট কাটতে যাওয়া মানুষদের ভোগান্তির চিত্র দেখে অজানা আশঙ্কা ছায়া ফেলতে শুরু করেছে। এক-দুই-তিন বা পাঁচ ঘণ্টা নয়, টানা ত্রিশ ঘণ্টা পর্যন্ত গরম-ঘামে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেও দেখা মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণটির!
স্টেশনমাস্টারের ভাষ্যমতে প্রতিদিন সকালে প্রায় আঠারো লাখ মানুষ সার্ভারে একসঙ্গে হিট করছে মাত্র তেরো-চৌদ্দ হাজার টিকিটের জন্য। একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকিট পেতে পারবে—এই হিসাবে ট্রেনে যেতে ইচ্ছুক যাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় বাহাত্তর লাখ! ভাবা যায়? এদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো পথে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবে। এই চাপ সামলানোর সক্ষমতা আমাদের সড়ক বা নৌপথের আছে কি? গত দুই দিনে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ফেরিঘাটে যানবাহনের মাইলের পর মাইল লম্বা সারিতে কার্যত অচল হয়ে পড়া যাত্রাপথে পাঁচ-সাত ঘণ্টা তীব্র গরমে গাড়িতে আটকে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়া নারী-শিশু-বৃদ্ধদের যে দুর্ভোগের চিত্র সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে বা হচ্ছে—এককথায় তা অসহনীয়।
ঈদের দুই দিন আগে অফিস-আদালত, গার্মেন্টস যখন একসঙ্গে ছুটি হবে তখন রাস্তাঘাটের কী চিত্র হবে, তা ভাবতেই আমার গা হিম হয়ে আসছে।
বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি। তাদের আবেগের কাছে করোনা মহামারিও তুচ্ছ ছিল। গত দুই বছর লকডাউন, কঠোর লকডাউন দিয়েও একটি বড় অংশকে আটকানো যায়নি।
তারা কখনো খোলা ট্রাকে, কখনো রিকশায় বা হেঁটে, কখনো প্রাইভেট কারে গাদাগাদি করে এমনকি মাছের ড্রামের ভেতর লুকিয়েও ছুটে গিয়েছে আপনজনের কাছে। তাতে ঈদ আনন্দের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রতিবেশী-সমাজ তথা দেশ।
গত কোরবানি ঈদের কথাই যদি বলি, তার আগে আমাদের গ্রামগুলো অনেকটাই ছিল করোনামুক্ত। কিন্তু ঈদে মানুষের এই অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তে গ্রাম-শহর সর্বত্র সংক্রমণ অতিমারি হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হিসাবের বাইরেও প্রচুর প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, ভেঙে পড়ে পুরো চিকিৎসাব্যবস্থা। অক্সিজেনের জন্য স্বজনদের হাহাকার এতটা চরমে পৌঁছেছিল যে সারা দেশে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও অক্সিজেন ব্যাংক নিয়ে রাত-দিন সেবাকাজ চালিয়েও সবার কাছে পৌঁছাতে পারেনি। অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করে মরেছে হতদরিদ্র থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাও।
যা-ই হোক, এবার করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সরকারের পক্ষ থেকেও নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা। তবে যা আছে, সেটা হলো আত্মজিজ্ঞাসা। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদেরই। বাসমালিক, লঞ্চমালিকেরা মুনাফার লোভে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে চাইবে। কিন্তু সেই চাওয়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পূরণ করব কি না, সেটি ভাবতে হবে আমাদেরই। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ আনন্দ দ্বিগুণ হবে এটি যেমন সত্যি, তেমনি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে কিংবা উন্নয়ন-সংস্কারে সংকুচিত সড়কপথে বেপরোয়া গতির বাস-ট্রাক-মোটরসাইকেল-ভটভটিতে চেপে ভোগান্তি তো বটেই জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না নিশ্চয়ই।
ঘরমুখী সবার ঈদযাত্রা নিরাপদ ও আনন্দের হোক। সাধ্যমতো সামর্থ্য নিয়ে আমরা সবাই একে অপরের পাশে দাঁড়াই। বিনির্মাণ করি আগামীর বৈষম্যহীন সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
মাসুদ উর রহমান , কলেজশিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী
টানা চার-চারটি ঈদ দেশবাসী উদ্যাপন করেছে উৎকণ্ঠিত চিত্তে, আনন্দহীন পরিবেশে। আত্মীয়-আপনজন তথা প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঈদ-আনন্দ ভাগাভাগি করার যে চিরায়ত ঐতিহ্য—তাতে ছেদ পড়েছে নিদারুণভাবে। এ সময়টায় শুধু যে উৎসব আনন্দ থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে তা-ই নয়, বরং ছোঁয়াচে করোনার করালগ্রাস থেকে নিজেকে তথা পরিবারকে বাঁচাতে গৃহবন্দিত্বের কাছে করেছে অসহায় আত্মসমর্পণ।
বছর ঘুরে আবারও সমাগত ঈদ উৎসব। ইতিমধ্যেই নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। এ ক্ষেত্রে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষদের ভোগান্তির চিত্রটিই সংবাদমাধ্যমে বেশি আসছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনে আগাম টিকিট কাটতে যাওয়া মানুষদের ভোগান্তির চিত্র দেখে অজানা আশঙ্কা ছায়া ফেলতে শুরু করেছে। এক-দুই-তিন বা পাঁচ ঘণ্টা নয়, টানা ত্রিশ ঘণ্টা পর্যন্ত গরম-ঘামে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেও দেখা মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণটির!
স্টেশনমাস্টারের ভাষ্যমতে প্রতিদিন সকালে প্রায় আঠারো লাখ মানুষ সার্ভারে একসঙ্গে হিট করছে মাত্র তেরো-চৌদ্দ হাজার টিকিটের জন্য। একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকিট পেতে পারবে—এই হিসাবে ট্রেনে যেতে ইচ্ছুক যাত্রীর সংখ্যা দাঁড়ায় বাহাত্তর লাখ! ভাবা যায়? এদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো পথে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবে। এই চাপ সামলানোর সক্ষমতা আমাদের সড়ক বা নৌপথের আছে কি? গত দুই দিনে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ফেরিঘাটে যানবাহনের মাইলের পর মাইল লম্বা সারিতে কার্যত অচল হয়ে পড়া যাত্রাপথে পাঁচ-সাত ঘণ্টা তীব্র গরমে গাড়িতে আটকে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়া নারী-শিশু-বৃদ্ধদের যে দুর্ভোগের চিত্র সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে বা হচ্ছে—এককথায় তা অসহনীয়।
ঈদের দুই দিন আগে অফিস-আদালত, গার্মেন্টস যখন একসঙ্গে ছুটি হবে তখন রাস্তাঘাটের কী চিত্র হবে, তা ভাবতেই আমার গা হিম হয়ে আসছে।
বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি। তাদের আবেগের কাছে করোনা মহামারিও তুচ্ছ ছিল। গত দুই বছর লকডাউন, কঠোর লকডাউন দিয়েও একটি বড় অংশকে আটকানো যায়নি।
তারা কখনো খোলা ট্রাকে, কখনো রিকশায় বা হেঁটে, কখনো প্রাইভেট কারে গাদাগাদি করে এমনকি মাছের ড্রামের ভেতর লুকিয়েও ছুটে গিয়েছে আপনজনের কাছে। তাতে ঈদ আনন্দের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রতিবেশী-সমাজ তথা দেশ।
গত কোরবানি ঈদের কথাই যদি বলি, তার আগে আমাদের গ্রামগুলো অনেকটাই ছিল করোনামুক্ত। কিন্তু ঈদে মানুষের এই অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তে গ্রাম-শহর সর্বত্র সংক্রমণ অতিমারি হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হিসাবের বাইরেও প্রচুর প্রাণহানির ঘটনা ঘটে, ভেঙে পড়ে পুরো চিকিৎসাব্যবস্থা। অক্সিজেনের জন্য স্বজনদের হাহাকার এতটা চরমে পৌঁছেছিল যে সারা দেশে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও অক্সিজেন ব্যাংক নিয়ে রাত-দিন সেবাকাজ চালিয়েও সবার কাছে পৌঁছাতে পারেনি। অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করে মরেছে হতদরিদ্র থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাও।
যা-ই হোক, এবার করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সরকারের পক্ষ থেকেও নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা। তবে যা আছে, সেটা হলো আত্মজিজ্ঞাসা। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদেরই। বাসমালিক, লঞ্চমালিকেরা মুনাফার লোভে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে চাইবে। কিন্তু সেই চাওয়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পূরণ করব কি না, সেটি ভাবতে হবে আমাদেরই। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ আনন্দ দ্বিগুণ হবে এটি যেমন সত্যি, তেমনি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে কিংবা উন্নয়ন-সংস্কারে সংকুচিত সড়কপথে বেপরোয়া গতির বাস-ট্রাক-মোটরসাইকেল-ভটভটিতে চেপে ভোগান্তি তো বটেই জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না নিশ্চয়ই।
ঘরমুখী সবার ঈদযাত্রা নিরাপদ ও আনন্দের হোক। সাধ্যমতো সামর্থ্য নিয়ে আমরা সবাই একে অপরের পাশে দাঁড়াই। বিনির্মাণ করি আগামীর বৈষম্যহীন সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
মাসুদ উর রহমান , কলেজশিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫