Ajker Patrika

জেলখানা নয়

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২২, ১২: ৫৯
জেলখানা নয়

অসহযোগ আন্দোলন যখন চলছিল, তখন শরৎচন্দ্র কায়মনোবাক্যে এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। উপন্যাস রচনায় ভাটা পড়েছিল। শখের দাবা খেলা ও ছিপ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হাওড়া জেলায় কংগ্রেসের আন্দোলন পরিচালনা করে প্রতিদিন কলকাতায় গিয়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে সাহায্য করতে লাগলেন।

সম্রাট পঞ্চম জর্জের বড় ছেলে প্রিন্স অব ওয়েলস ভারতবর্ষ ভ্রমণে এসেছিলেন ১৯২১ সালে। ভারতবর্ষের তাঁবেদার নৃপতিবৃন্দই এই ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছিল ইংল্যান্ডের সরকার ও ভারত সরকারের পরামর্শে। রাজপুত্রের মুখ দিয়ে কিছু ভালো কথা বলানো হবে এবং উজ্জ্বল আশার বাণী শুনিয়ে তিনি জনসাধারণের মন জয় করবেন, এটাই ছিল আশা।

এ সময় কংগ্রেস ঝটিতি প্রস্তাব গ্রহণ করল, প্রিন্স অব ওয়েলসের অভ্যর্থনা বয়কট করা হবে। রাজপুত্র বোম্বে পৌঁছালেন ১৭ নভেম্বর। সরকারি কর্মচারী এবং ইউরোপিয়ান তাঁকে বরণ করে নিলেন। কিন্তু সমগ্র জনসাধারণ রাজপুত্রকে বয়কট করল। ছোটখাটো বিরোধ থেকে শুরু হলো দাঙ্গা।

প্রিন্স কলকাতায় পৌঁছালেন ২৪ ডিসেম্বর। পরিপূর্ণ হরতাল হলো শহরে। বিশাল কলকাতা যেন শ্মশান। সরকার শুরু করল ধরপাকড়। পণ্ডিত মতিলাল নেহরু, লালা লাজপত রায়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, মৌলানা আবুল কালাম আজাদসহ কংগ্রেসের হাজার হাজার কর্মী গ্রেপ্তার হলেন।

যখন চারদিকে গ্রেপ্তারের হিড়িক, তখন শরৎচন্দ্র জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওহে হেমন্ত, জেলখানাতে আফিম খেতে দেয়?’

হেমন্ত সরকার বললেন, ‘না।’

‘তামাক খেতে দেয়?’

‘আজ্ঞে তা-ও খেতে না।’

শরৎচন্দ্র বললেন, ‘আরে দূর দূর! জেলখানাটা দেখছি মোটেই ভদ্রলোকের স্থান নয়। ও আমার পোষাবে না। গভর্নমেন্ট যদি একটা গুলি গোলা চালিয়ে দেয়, তার মুখে গিয়ে দাঁড়াতে পারি। কিন্তু ওই ভেড়ার গোয়ালে বসে বসে দিনরাত্রি কড়িকাঠ গুনে মাসের পর মাস কাটানো আমার দ্বারা হবে না।’

শরৎচন্দ্র জেলে গেলেন না, তবে কংগ্রেসের কাজ করে যেতে লাগলেন।

সূত্র: শচীনন্দন চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবন, পৃষ্ঠা ২৩-২৫

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত