Ajker Patrika

মাহেন্দ্রক্ষণ

লিয়ার লেভিন
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৪৮
মাহেন্দ্রক্ষণ

একাত্তর যে শুধু অস্ত্রে অস্ত্রে ঠোকাঠুকি ছিল না, ছিল জনযুদ্ধ, সে কথা এখন সবাই বুঝতে পারে। সামরিক ফ্রন্টের বাইরেও ছিল আরও অনেক ফ্রন্ট। তেমনি একটি ফ্রন্ট ছিল সাংস্কৃতিক ফ্রন্ট। তারেক মাসুদ আর ক্যাথরিন মাসুদের ‘মুক্তির গান’ ছবিতে সেই ফ্রন্টটিকে ভালো করে চেনা যায়।

কাজটি করেছিলেন লিয়ার লেভিন। ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’ ছিল বাংলাদেশের শিল্পীদের নিয়ে তৈরি একটি সাংস্কৃতিক দল। তাদের সঙ্গে ছিল একটি ট্রাক। সেই ট্রাকে করেই তাঁরা ঘুরে বেড়িয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পথে-প্রান্তরে। গান গেয়ে উজ্জীবিত করেছেন উদ্বাস্তুশিবিরে থাকা অসহায় বাঙালিদের। মার্কিন নাগরিক লিয়ার লেভিন এই ট্রাকটির পেছনে পেছনে নিজের বাহনে করে যেতেন। তাতে থাকত ক্যামেরা, ক্যামেরার যন্ত্রপাতি, শুটিং দল। তিনি সেলুলয়েডে ধরে রাখতে চাইছিলেন এই সাংস্কৃতিক দলটির কর্মকাণ্ড। তিনি তখন জানতেন না, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ এক অমূল্য সংযোজন হয়ে থাকবে।

শুটিং করার সময়ই তিনি মানুষের দৃঢ়প্রত্যয়ী চোখ দেখে নিশ্চিত হয়েছেন, এ জাতি স্বাধীনতার স্বাদ পাবেই। তাঁর ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বিজয়ী এই দলের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে যাবেন। শুট করতে করতেই ঢুকে পড়বেন রাজধানী ঢাকায়। কিন্তু সে স্বপ্ন তাঁর পূরণ হয়নি। কলকাতার কাছে একদিন যখন শুটিং করছিলেন, তখন কলকাতার পুলিশ তাঁকে মার্কিন গুপ্তচর সন্দেহে ভারত থেকে বহিষ্কার করে। সে সময় ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খুবই তিক্ত অবস্থায় পৌঁছেছিল। তারই শিকার হলেন লিয়ার লেভিন।

লিয়ার লেভিন ফিরে এলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে, নিজের স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের বাড়িতে। ফুটেজের ক্যানগুলো ফেলে রাখলেন বাড়ির বেজমেন্টে। তিনি ভেবেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের ওপর তোলা ছবিটি আর সম্পাদনার টেবিলে যাবে না, কেউ আর তা দেখতে পাবে না। কিন্তু ১৯৯০ সালে তারেক মাসুদ আর ক্যাথরিন মাসুদ যখন তাঁর কাছে গেলেন ফুটেজগুলোর জন্য; তখন লিয়ার লেভিন জানালেন, এত দিন এই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্যই তিনি অপেক্ষা করছিলেন।

সূত্র: মনিস রফিক, প্রবাসীকণ্ঠ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত