Ajker Patrika

সংস্কার শেষের আগেই ত্রুটি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১২: ০৩
সংস্কার শেষের আগেই ত্রুটি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার আগেই বেঁকে গেছে দরজা। সৃষ্টি হয়েছে ফাঁকফোকর। প্লাটফর্ম ঢালাইয়ের কাজও নিম্নমানের। অভিযোগ আছে, কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার যেমন দেখা মেলে না, তেমনি ঠিকাদারও থাকেন অগোচরে। গুরুত্বপূর্ণ এই রেলস্টেশনের এমন কাজ নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে স্টেশনের কর্মচারীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।

এদিকে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে অচল ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন। যাত্রাবিরতি নেই অধিকাংশ ট্রেনের। যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে। জেলা সদরের যাত্রীদের পার্শ্ববর্তী আশুগঞ্জ বা আখাউড়া রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনে উঠতে হচ্ছে। এই অবস্থায় মাসে কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে সরকারের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্লাটফর্ম উঁচুকরণ এবং প্ল্যাটফর্ম বিল্ডিংয়ের মেরামত কাজ করছে মাহফুজ ট্রেডার্স ও রেজাউল মোল্লা নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্লাটফর্ম উঁচুকরণ কাজের বরাদ্দ এক কোটি টাকা। আর প্লাটফর্ম বিল্ডিংয়ের মেরামত কাজ হচ্ছে ৪৩ লাখ টাকায়।

কিন্তু স্টেশনের কাজের মান নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলা শহরের নাগরিকেরাও। রেলস্টেশন সচল করার দাবিতে মানববন্ধন-বিক্ষোভে এ নিয়ে তাঁরা অভিযোগ তুলছেন বারবার। স্টেশনের অনেকে জানান, ঢালাইয়ের কাজে রড যথাযথ ব্যবহার করা হয়নি। নিম্নমানের সিমেন্ট দিয়ে কাজ দায়সারাভাবে করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে গাঁথুনিতে ইট বসানো হচ্ছে মাটি-ময়লা-আবর্জনার ওপরই।

ইতিমধ্যে রেলস্টেশনের দরজা নিম্নমানের এবং ফাঁকফোকর সৃষ্টি হওয়ায় টিকিটিং ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা সিএনএন নামের প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য বরাদ্দ করা কক্ষ বুঝে নেয়নি।

এদিকে তদারক কর্মকর্তা বাংলাদেশ রেলওয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধেও বেশ কিছু অভিযোগ আছে। হাতবদলে নিজেই এই কাজের ঠিকাদারি বাগিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েক দিন সরেজমিন স্টেশনে গিয়ে ঠিকাদার রেজাউল মোল্লা ও জহির কারও দেখাই পাওয়া যায়নি। জহির ঢাকায় আর রেজাউল ভৈরব আছেন বলে জানা গেছে।

মোবাইল ফোনে রেজাউল মোল্লা বলেন, ‘কাজের বিষয়ে জানানো যাবে না। সিক্রেট বিষয়।’

কাজ তদারকের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ রেলওয়ে উপসহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন, ‘কাজ নিম্নমানের হচ্ছে, সেটা বুঝলেন কীভাবে?’ বর্তমানে এখান থেকে ভৈরবে বদলি হয়ে গেছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে স্টেশনের অচলাবস্থা নিরসন এবং নিম্নমানের কাজের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রয়েছে জেলার নাগরিক সংগঠনগুলো। এই দাবিতে পূর্বাঞ্চল রেলপথ অচল করে দেওয়ার আলটিমেটামও রয়েছে তাদের।

মেরামত কাজ শেষ হলে আগামী এক মাসের মধ্যে স্টেশন সচল হতে পারে বলে জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন মাস্টার মো. শোয়েব। তিনি বলেন, বিল্ডিং মেরামতের কাজ শেষ হয়েছে।

সিগন্যালের পয়েন্টগুলো সেট করা হয়েছে। তবে সিগন্যালের তার টানা শেষ হয়নি। মেশিনপত্র এলে কাজ সম্পন্ন হবে। এক কোটি টাকায় ব্রডগেজ লাইনের জন্য প্ল্যাটফর্ম উঁচু করা হচ্ছে। আর ৬০ লাখ টাকায় বিল্ডিং মেরামতের কাজ হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬-২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালান হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকেরা। এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর হয়। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় সবকিছু। এরপর থেকে এ স্টেশনে আন্তনগর, মেইল ও কমিউটার ট্রেনের যাত্রাবিরতি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। স্টেশনের মর্যাদা ডি শ্রেণিতে নামিয়ে দেওয়া হয়।

আন্দোলনের মুখে ঘটনার সাড়ে ৪ মাস পর ১৫ জুন থেকে পুরোনো আমলের সিগন্যালিং ব্যবস্থায় এখানে ৬ জোড়া ট্রেনের যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করা হয়। আন্তনগর পারাবত, নোয়াখালী এক্সপ্রেস, তিতাস কমিউটার, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস এবং নাছিরাবাদ যাত্রাবিরতি করলেও যাত্রীদের চাহিদার কোনো ট্রেন এখানে থামছে না। প্রতিদিন এ স্টেশন থেকে ৬ হাজারের বেশি যাত্রী চলাচল করলেও এখন হাজার দুয়েক যাত্রী চলাচল করতে পারছেন। তাঁদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

আইসিএক্স বাদ দিলে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত