Ajker Patrika

৫৪৫ বর্গফুট জমিতে নয়তলা!

অরূপ রায়, সাভার (ঢাকা) থেকে
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১২: ৪৬
৫৪৫ বর্গফুট জমিতে নয়তলা!

পৌর এলাকার ভেতরে ইমারত বা স্থাপনা নির্মাণের আগে নকশার অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯ অনুযায়ী ইমারত বা স্থাপনার নকশা অনুমোদনের জন্য গঠিত কমিটি এই অনুমোদন দিয়ে থাকে। সাভার পৌর এলাকায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এই আইন মানছেন না অনেকেই।

পৌর এলাকার ওয়াপদা রোডে অনুমোদন ছাড়াই মাত্র ৫৪৫ বর্গফুট জমির ওপর নয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি। এরপরও পৌরসভার ইমারত বা স্থাপনার নকশা অনুমোদনের জন্য গঠিত কমিটি বা পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাভারে পৌরসভার পাশাপাশি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ইমারত বা স্থাপনার নকশার অনুমোদন দিয়ে থাকে। এটি স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯-এর পরিপন্থী। আইন অনুযায়ী সাভার পৌরসভা সাততলা বা ৭৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু ভবনের নকশার অনুমোদন দিতে পারে। এ কারণে সাভারের অনেকেই রাজউকের অনুমোদন নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন।

এদিকে, অনেকে আবার অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করছেন বহুতল ভবন। অনেকে পৌরসভা থেকে সাততলা পর্যন্ত অনুমোদন নিয়ে নির্মাণ করছেন আট থেকে নয়তলা ভবন। সাভারে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব অনিয়ম সম্ভব হচ্ছে পৌর ও রাজউক কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে।

পৌরসভার ওয়াপদা রোডের বাসিন্দারা বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে আনোয়ার হোসেন প্রথমে তিনতলা ভবন নির্মাণ করেন, যার হোল্ডিং নম্বর ৩/৩। বছর চারেক আগে তিনতলা ভবনকে নয়তলা পর্যন্ত বর্ধিত করেন তিনি। ভবন নির্মাণের আগে ইমারত বা স্থাপনা নির্মাণে নকশা অনুমোদনের জন্য গঠিত কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অনুসরণ করা হয়নি ইমারত নির্মাণ বিধিমালা।

সাভার পৌরসভার প্রকৌশল শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, বছরখানেক আগে পাশের একটি ভবন হেলে পড়লে আনোয়ার হোসেনের বহুতল ভবনটি তাঁদের নজরে আসে। এর পর অনুমোদিত নকশাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে গত বছর নভেম্বর মাসে আনোয়ার হোসেনকে পৌরসভার পক্ষ থেকে পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এক বছরেও আনোয়ার হোসেন পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো কাগজপত্র জমা দেননি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি কাগজপত্র চেয়ে আনোয়ার হোসেনকে আরও একটি পত্র দেওয়া হয়। এরপরও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

সরেজমিনে দেখা যায়, আনোয়ার হোসেনের ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াপদা রোডের প্রিয়াঙ্কা ম্যানশনের পূর্ব পাশের দেয়াল ঘেঁষে। ভবন দুটির মধ্যে কোনো ফাঁক নেই, যা ইমারত নির্মাণ বিধিমালার পরিপন্থী। উত্তর পাশের অপর একটি বহুতল ভবন থেকে আনোয়ার হোসেনের ভবনটির নিচের দিকে কয়েক ফুট জায়গা থাকলেও ওপরের দিকে প্রায় মিলে গেছে।

ভবনটির অনুমোদন বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। এরপর তাঁর সঙ্গে দেখা করে জানার চেষ্টা করা হলেও তিনি রাজি হননি।

আনোয়ার হোসেনের ভবন থেকে আধা কিলোমিটার দূরে জ্বালেশ্বর এলাকায় জাহাঙ্গীরনগর নগর কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির ভেতরে প্রায় অর্ধশত বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই আট থেকে নয়তলা। সাভার পৌরসভা থেকে এসব ভবনের নকশার অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

জাহাঙ্গীরনগর নগর কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির হিসাবরক্ষক মো. শাহীন বলেন, ভবন নির্মাণের আগে ভবন মালিকেরা পৌরসভায় কোনো আবেদন করেননি। সোসাইটির ভেতরে যেসব ভবন নির্মাণ হয়েছে, তার নকশার অনুমোদন দিয়েছে রাজউক। রাজউকের অনুমোদন ছাড়া কোনো ভবন নির্মাণ করা হয়নি।

সাভার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইমাম বলেন, সাভার পৌরসভা ড্যাপের (ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান) আওতাভুক্ত হওয়ায় পৌরসভার পাশাপাশি রাজউক বহুতল ভবনের (সাত তলার ওপরে) নকশা অনুমোদন দিয়ে থাকে। যদিও ড্যাপ এখনো কার্যকর হয়নি। এর ফলে পৌরসভার ইমারত বা স্থাপনার নকশা অনুমোদনের জন্য গঠিত কমিটির পক্ষে সব তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না।

শরিফুল ইমাম বলেন, অনেকে রাজউকের অনুমোদের কথা বলে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। অভিযোগ পেলে তাঁদের অনুমোদন সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে পৌরসভায় হাজির হওয়ার জন্য পত্র দেওয়া হয়। তবে বারবার পত্র দেওয়ার পরেও তাঁদের সাড়া পাওয়া যায় না।

আনোয়ার হোসেনের ভবনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘মাত্র সোয়া শতাংশ জমির ওপরে আনোয়ার হোসেন নয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন, যা ঝুঁকিপূর্ণ। নির্মাণের আগে পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদন নেওয়া হয়নি। কিন্তু বাড়ির মালিক দাবি করছেন তাঁর অনুমোদন আছে। এ জন্য তাঁর কাছে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। দুইবার পত্র দেওয়ার পরেও তাঁর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তাঁকে আবারও পত্র দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত