নুসরাত জাহান শুচি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেকোনো ক্লাসে গিয়ে যদি জানতে চাওয়া হয়, ‘তোমরা কী হতে চাও,’ বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বলবে, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার। এর কারণও খুব যথার্থ।
কথায় বলে, ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।’ তাই শৈশবেই মা-বাবা যথাসাধ্য চেষ্টা করে মাথায় ঢুকিয়ে দেন যে আমাদের ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ারই হতে হবে।কেননা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার না হতে পারলে জীবনের বারো আনাই বৃথা। এখন অবশ্য ধারণা পাল্টে গেছে। এই তালিকায় বিসিএস ক্যাডাররা এখন অনেকটাই এগিয়ে। তাই অনেক ক্ষেত্রে আমরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদেরও দেখি ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে জয়কলি, জব সল্যুশনসের মতো বই নিয়ে লাইব্রেরিতে বসতে।
আমার পরিচিত একজন রাজশাহী মেডিকেলে পড়াকালীন বলেছিলেন, ‘বুঝলে, চিকিৎসকের জীবন ভালো লাগে না। বিসিএসটা দিয়ে যদি কোনোভাবে ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারি, তাহলে ডাক্তারি আর করব না। তা ছাড়া, এখন ডাক্তারের চেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা, সম্মান বেশি।’ তাঁর কথায় বুঝেছিলাম তিনি চিকিৎসকের পেশাটা সেকেন্ডারি অপশন হিসেবেই রেখেছেন। ভেবে দেখুন, এই দারিদ্র্যের দেশে সরকার একজন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসক বানানোর জন্য কয়েক লাখ টাকা খরচ করছে। যার ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে কেবলই শূন্য। এ থেকে বোঝা যায়, আমাদের দেশে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্ব কতটা অবহেলিত!
তবে এর চেয়েও ভয়াবহ একটি বিষয়, যা সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়ালেও হয়তো আমাদের চিন্তার অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি—দেশের শতকরা ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থীই অর্ধজীবন, অর্থাৎ ৩০-৩২ বছর পর্যন্ত মা-বাবার মুখাপেক্ষী হয়ে জীবন কাটিয়ে দেন। কেননা, চাহিদার তুলনায় কর্মসংস্থান অপ্রতুল হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই জীবনের ৩২ বছর পেরিয়ে যায় একটি সরকারি চাকরির প্রত্যাশায়।
যেখানে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বে সব উন্নত দেশেই শৈশবকাল থেকে শেখানো হয় আত্মনির্ভরশীল হতে। তাই ১৮-তে পা দেওয়ার আগেই তারা আত্মনির্ভরশীল হতে পারে, যা আমাদের সমাজে ভাবাটাও একটি বিশাল দুঃসাহসিক বিষয় বৈকি!
এর পেছনে যে কেবল যুবসমাজই দায়ী, তা নয়। এর দায় বর্তায় আমাদের পরিবার, সমাজ এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের ওপর।
যদি একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কোনো হোটেলে ওয়েটার, ডেলিভারি পারসন, গ্রন্থাগারের হিসাবরক্ষক, ব্যবসা বা কৃষি সম্পৃক্ত কোনো কাজ করে, তাহলে ধরেই নেওয়া হয় তার কোনো আত্মসম্মান নেই বা সে দুবেলা খেতে পায় না। খুব সহজেই আমরা তাকে ‘ছোটলোক’ তকমাও দিয়ে দিই। সোজা বাংলায় বাঙালির মতে, কায়িক পরিশ্রম মানেই ‘কামলা’ খাটা। এমনকি আমাদের সমাজে যেসব শিক্ষার্থী টিউশনি করায়, তাদেরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়।
অথচ ঠিক একই সময়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বের সব উন্নত দেশে সব কাজকে সম্মান করা হয়। তারা কাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না বলেই এগিয়ে থাকে অন্যদের থেকে। তাদের উন্নয়নের মূলমন্ত্র পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনমুখী শিক্ষা গ্রহণ।
অপরদিকে আমরা মনে করি, কারিগরি শিক্ষা কেবল তারাই গ্রহণ করবে, যাদের দ্বারা পড়াশোনা হবে না। যখন আমাদের দ্বারা আর কোনো কাজ হবে না, তখনই কেবল আমরা কায়িক পরিশ্রম করব। অন্যথায় নয়; যা আমাদের স্থবিরতার অন্যতম কারণ।
অপরদিকে কেবল কায়িক শ্রমকে পুঁজি করেও যে অলৌকিক অর্থনীতির জন্ম দেওয়া যায়, এমনই একটি উদাহরণ চীন। চীনের মূল চালিকাশক্তি তাদের কর্মী বাহিনী। ফলে ৪০ বছরে চীনে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। চীন পরিচিত হয়েছে ‘বিশ্বের মেগা কারখানা’ হিসেবে।
ঠিক উল্টো দিকে বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগই তরুণ। অথচ শুধু পুঁথিগত বিদ্যা, সরকারি চাকরির পেছনে ছুটে আমরা তৈরি করছি বেকারের কারখানা, হতাশা, বোঝা। অতঃপর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আত্মহত্যা। সময় এসেছে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের, ফাইল বোঝাই করে সনদ নিয়ে না ঘুরে নিজের প্রচেষ্টায় অন্যের জন্য কর্মসংস্থান গড়ে দেওয়ার। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রই পারে সর্বোৎকৃষ্ট ভূমিকা পালন করতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষায়, বাড়াতে হবে কর্মমুখী শিক্ষার প্রশিক্ষণ। উদ্বুদ্ধ করতে হবে নব উদ্দীপনার জীবন গড়ার আকাঙ্ক্ষাকে। বিখ্যাত লেখক ডেল কার্নেগি বলেছেন, যার মাঝে সীমাহীন উৎসাহ, বুদ্ধি ও একটানা কাজ করার গুণ থাকে, তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
লেখক: সাংবাদিক
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেকোনো ক্লাসে গিয়ে যদি জানতে চাওয়া হয়, ‘তোমরা কী হতে চাও,’ বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বলবে, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার। এর কারণও খুব যথার্থ।
কথায় বলে, ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।’ তাই শৈশবেই মা-বাবা যথাসাধ্য চেষ্টা করে মাথায় ঢুকিয়ে দেন যে আমাদের ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ারই হতে হবে।কেননা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার না হতে পারলে জীবনের বারো আনাই বৃথা। এখন অবশ্য ধারণা পাল্টে গেছে। এই তালিকায় বিসিএস ক্যাডাররা এখন অনেকটাই এগিয়ে। তাই অনেক ক্ষেত্রে আমরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদেরও দেখি ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে জয়কলি, জব সল্যুশনসের মতো বই নিয়ে লাইব্রেরিতে বসতে।
আমার পরিচিত একজন রাজশাহী মেডিকেলে পড়াকালীন বলেছিলেন, ‘বুঝলে, চিকিৎসকের জীবন ভালো লাগে না। বিসিএসটা দিয়ে যদি কোনোভাবে ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারি, তাহলে ডাক্তারি আর করব না। তা ছাড়া, এখন ডাক্তারের চেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা, সম্মান বেশি।’ তাঁর কথায় বুঝেছিলাম তিনি চিকিৎসকের পেশাটা সেকেন্ডারি অপশন হিসেবেই রেখেছেন। ভেবে দেখুন, এই দারিদ্র্যের দেশে সরকার একজন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসক বানানোর জন্য কয়েক লাখ টাকা খরচ করছে। যার ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে কেবলই শূন্য। এ থেকে বোঝা যায়, আমাদের দেশে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্ব কতটা অবহেলিত!
তবে এর চেয়েও ভয়াবহ একটি বিষয়, যা সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়ালেও হয়তো আমাদের চিন্তার অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি—দেশের শতকরা ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থীই অর্ধজীবন, অর্থাৎ ৩০-৩২ বছর পর্যন্ত মা-বাবার মুখাপেক্ষী হয়ে জীবন কাটিয়ে দেন। কেননা, চাহিদার তুলনায় কর্মসংস্থান অপ্রতুল হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই জীবনের ৩২ বছর পেরিয়ে যায় একটি সরকারি চাকরির প্রত্যাশায়।
যেখানে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বে সব উন্নত দেশেই শৈশবকাল থেকে শেখানো হয় আত্মনির্ভরশীল হতে। তাই ১৮-তে পা দেওয়ার আগেই তারা আত্মনির্ভরশীল হতে পারে, যা আমাদের সমাজে ভাবাটাও একটি বিশাল দুঃসাহসিক বিষয় বৈকি!
এর পেছনে যে কেবল যুবসমাজই দায়ী, তা নয়। এর দায় বর্তায় আমাদের পরিবার, সমাজ এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের ওপর।
যদি একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কোনো হোটেলে ওয়েটার, ডেলিভারি পারসন, গ্রন্থাগারের হিসাবরক্ষক, ব্যবসা বা কৃষি সম্পৃক্ত কোনো কাজ করে, তাহলে ধরেই নেওয়া হয় তার কোনো আত্মসম্মান নেই বা সে দুবেলা খেতে পায় না। খুব সহজেই আমরা তাকে ‘ছোটলোক’ তকমাও দিয়ে দিই। সোজা বাংলায় বাঙালির মতে, কায়িক পরিশ্রম মানেই ‘কামলা’ খাটা। এমনকি আমাদের সমাজে যেসব শিক্ষার্থী টিউশনি করায়, তাদেরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়।
অথচ ঠিক একই সময়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বের সব উন্নত দেশে সব কাজকে সম্মান করা হয়। তারা কাজের মধ্যে কোনো পার্থক্য করে না বলেই এগিয়ে থাকে অন্যদের থেকে। তাদের উন্নয়নের মূলমন্ত্র পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনমুখী শিক্ষা গ্রহণ।
অপরদিকে আমরা মনে করি, কারিগরি শিক্ষা কেবল তারাই গ্রহণ করবে, যাদের দ্বারা পড়াশোনা হবে না। যখন আমাদের দ্বারা আর কোনো কাজ হবে না, তখনই কেবল আমরা কায়িক পরিশ্রম করব। অন্যথায় নয়; যা আমাদের স্থবিরতার অন্যতম কারণ।
অপরদিকে কেবল কায়িক শ্রমকে পুঁজি করেও যে অলৌকিক অর্থনীতির জন্ম দেওয়া যায়, এমনই একটি উদাহরণ চীন। চীনের মূল চালিকাশক্তি তাদের কর্মী বাহিনী। ফলে ৪০ বছরে চীনে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। চীন পরিচিত হয়েছে ‘বিশ্বের মেগা কারখানা’ হিসেবে।
ঠিক উল্টো দিকে বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগই তরুণ। অথচ শুধু পুঁথিগত বিদ্যা, সরকারি চাকরির পেছনে ছুটে আমরা তৈরি করছি বেকারের কারখানা, হতাশা, বোঝা। অতঃপর কিছু কিছু ক্ষেত্রে আত্মহত্যা। সময় এসেছে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের, ফাইল বোঝাই করে সনদ নিয়ে না ঘুরে নিজের প্রচেষ্টায় অন্যের জন্য কর্মসংস্থান গড়ে দেওয়ার। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রই পারে সর্বোৎকৃষ্ট ভূমিকা পালন করতে। জোর দিতে হবে কারিগরি শিক্ষায়, বাড়াতে হবে কর্মমুখী শিক্ষার প্রশিক্ষণ। উদ্বুদ্ধ করতে হবে নব উদ্দীপনার জীবন গড়ার আকাঙ্ক্ষাকে। বিখ্যাত লেখক ডেল কার্নেগি বলেছেন, যার মাঝে সীমাহীন উৎসাহ, বুদ্ধি ও একটানা কাজ করার গুণ থাকে, তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
লেখক: সাংবাদিক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫