Ajker Patrika

গাছতলায় সরকারি স্কুল

হোসাইন আলী কাজী, আমতলী (বরগুনা)
আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২১, ১০: ০৮
গাছতলায় সরকারি স্কুল

বিদ্যালয়ের টিনশেড ঘর ভেঙে পরায় আমতলী শিশু কল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলছে গাছতলায়। গত শুক্রবার রাতে বিদ্যালয়ের নড়বড়ে ঘরটি ভেঙে পড়ে। গত তিন দিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা ক্লাস করছে গাছতলায়। দ্রুত বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা।

জানা গেছে, উপজেলার অসহায় ও দুস্থ শিশুদের জন্য ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আমতলী শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৬ সালে বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণ করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিজস্ব কোনো ভবন হয়নি বিদ্যালয়টির।

পাশের বেগম নুরজাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে শুরু হয় শিশু কল্যাণ বিদ্যালয়ের শিশুদের ক্লাস। পরে পার্শ্ববর্তী একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জীর্ণ ভবনে চলে বিদ্যালয়টির ক্লাস ও অন্যান্য কার্যক্রম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও ইয়াসের প্রভাবে মাদ্রাসার টিনশেড ঘরটি আরও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে।

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে এলে ওই মাদ্রাসা ঘরে আবার শুরু হয় বিদ্যালয়টির কার্যক্রম।

গত শুক্রবার রাতে টিনশেডের ওই ঘরটিও ভেঙে পড়ে। নিরুপায় হয়ে শিক্ষকেরা ভাঙা ঘরের ভিটাতে গাছের নিচে বেঞ্চ বিছিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন।

গত রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা গাছতলায় বেঞ্চ বিছিয়ে রোদে পুড়ে ক্লাস করছে।

বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সারা মনি বলে, ‘বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। মাদ্রাসার যে ঘরে ক্লাস করতাম তাও ভেঙে পড়েছে। এখন গাছতলায় বসে ক্লাস করতে হচ্ছে।’

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৃষা, রুমা ও কাইয়ুম বলে, মোগো স্কুলের ঘর নাই। মোরা রইদে বইসা ক্লাস হরি।

প্রাথমিক বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সানজিদা খানম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় এত দিন আমরা একটি মাদ্রাসা ঘরে ক্লাস করাতাম। মাদ্রাসা ঘরটিও ভেঙে পড়েছে। এখন নিরুপায় হয়ে গাছতলায় বসে শিশুদের ক্লাস করাচ্ছি।’

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক হেলাল রাঢ়ী বলেন, ‘এখন গাছতলায় ক্লাস করতে গুরাগাড়ার ব্যামালা কষ্ট অইতে আছে। কবে নিজেদের স্কুল ভবন হবে কে জানে!’

শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট আরিফ-উল-হাসান আরিফ বলেন, ‘বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভবন নেই। এত দিন মাদ্রাসার ঘরে ক্লাস নিতাম। ওই ঘরটিও ভেঙে পড়েছে। নিরুপায় হয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে হচ্ছে। শিশুদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে এখানে দ্রুত একটি ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন।’

আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ভবন প্রয়োজন। ভবন না থাকায় শিশুদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।’

এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাওসার হোসেন বলেন, ‘দ্রুত ভবন নির্মাণ করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত